বাংলাদেশের যে তরুণরা চাঁদে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা দেবে

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এ যাবতকালের বিভিন্ন গবেষণার তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে ‘লুনার ভিআর’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল।

এটি ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে’ বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব ছিনিয়ে এনেছে।

এই অ্যাপ থেকে কী জানা যাবে?
এই অ্যাপটির মাধ্যমে মূলত নাসার অ্যাপোলো-১১ অভিযান, মহাকাশ যানটির অবতরণ এলাকা, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা এবং চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আবর্তন করা যাবে।

নাসায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকারী এই দলটির নাম সাস্ট অলিক। ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে মোট পাঁচজন সদস্য রয়েছেন এখানে।

তারা হলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম, আবু সাদিক মাহদি এবং সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম রাফি আদনান।

আর এই দলটিকে মেন্টর হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, এই পুরো অ্যাপ্লিকেশনের ব্যাপারে।

পৃথিবী থেকে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন কাছ থেকে চাঁদকে দেখার সুযোগ পেয়েছে।

সেইসব মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা সেইসঙ্গে নাসার তথ্য উপাত্ত থেকে চাঁদের ব্যাপারে যে ধারণা পাওয়া গেছে সেগুলো সমন্বিত করে এই অ্যাপে দৃশ্যমান করা হয়েছে বলে জানান বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, “লুনার ভিআরের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারবে চাঁদের পৃষ্ঠটা দেখতে কেমন, সেখানে কী কী আছে, সেখানকার তাপমাত্রা কেমন, মহাকাশ যান অ্যাপোলো-১১ কোথায় অবতরণ করেছিল।”

অর্থাৎ নাসার যে গবেষণাগুলো সাধারণ মানুষের আজও অদেখা অজানা, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি।

যার মাধ্যমে যে কেউ চাঁদে না গিয়েও চাঁদ দেখতে কেমন সেটা ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। ঘুরতে পারবেন। হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন।

এছাড়া চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ দেখতে কেমন লাগবে, সূর্যগ্রহণের অভিজ্ঞতা কেমন হবে সেটার একটি কল্পিত রূপ তুলে ধরা হয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনে। যার নাম রাখা হয়েছে সোলায়লিপস।

কিভাবে পাওয়া যাবে লুনার ভিআর :
মূলত চাঁদে ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবে লুনার ভিআর।

এতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়ে আরও জানার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন অনুসন্ধিৎসু দলটির প্রধান অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে লুনার ভিআর নামের এই অ্যাপটি সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন।

এছাড়া আই ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলে শিগগিরই এই অ্যাপটি যুক্ত করার কথা রয়েছে।

নাসার কাছে এই চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে যতো তথ্য আছে সেগুলোর একটি পরাবাস্তব রূপ এই অ্যাপ্লিকেশনটি।

যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে মহাকাশ গবেষণার তথ্য উপাত্তগুলো সহজ ভাষায় ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

প্রতিযোগিতার আদ্যোপান্ত :
এ বছর নাসা, বিশ্বের দুই শতাধিক শহরে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা শহর থেকে এই প্রতিযোগিতার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা জমা দিতে বললে, প্রাথমিকভাবে দুই হাজারের বেশি প্রজেক্ট জমা পড়ে।

সেখান থেকে প্রতি জেলা থেকে একটি করে মোট আটটি প্রকল্প বেছে নেয়া হয় নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য।

চূড়ান্ত প্রতিযোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের প্রজেক্ট নাসার কাছে জমা দেয়।

পরে আন্তর্জাতিক আসরে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের সাস্ট অলিক।
মূল প্রতিযোগিতায় মোট ছয়টা ক্যাটাগরির মধ্যে “বেস্ট ইউটিলাইজেশন অব ডেটা” অর্থাৎ নাসার কাছে যে তথ্য আছে তার সবচেয়ে ভাল প্রয়োগের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ ‘লুনার ভিআর’ প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন।

পেছনে ফেলে দেয় ক্যালিফোর্নিয়া, কুয়ালালামপুর ও জাপান থেকে আসা দলগুলোকে। বৈশ্বিক পর্যায়ের এমন আসরে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়া এটাই প্রথম।

এছাড়া বেস্ট ইউজ অব হার্ডওয়ার ক্যাটাগরিতেও শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘প্ল্যানেট কিট’।
সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top