ফুলবাড়ীয়ায় ঋণ দেয়ার নামে অসহায় মানুষের ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম পাটুলী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রাম সমিতির ৭৯ জন সদস্যের নামে ১৩ লাখ টাকা ভুয়া ঋণ দেখিয়ে আত্নসাৎ করা হয়েছে। ভূয়া ঋণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আছিম ক্লাস্টার অফিসের ইনচার্জ আইনুন্নাহার। ঐ সমিতি পরিচালনা করে সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) নামের এনজিও। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্বশাসিত ও অলাভজনক সংস্থা।

চরম দরিদ্র ও দরিদ্রদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করা এসডিএফ এনজিও ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে জরিপ কাজ শেষে ১০ হাজার সদস্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে কাজ শুরু করে। এনজিওটি উপজেলাকে দুটি অংশে বিভক্ত করে ফুলবাড়ীয়ার ভালুকজানে নিজস্ব জমিতে ক্লাস্টার অফিস ও আছিমে ভাড়া বাসায় অপর একটি ক্লাস্টার অফিস স্থাপন করে। দুই ক্লাস্টার অফিসের অধীনে ৩০ টি করে ৬০ টি গ্রাম সমিতি রয়েছে। এনজিওটি জমি কিনে হাফ বিল্ডিং সমিতিগুলোর জন্য অফিস ঘর নির্মান করে দিয়েছে। ৬০টি গ্রাম সমিতির মধ্যে গোপালপুর গ্রাম সমিতি একটি। ঐ গ্রাম সমিতিতে ১৬৫ জন সদস্যা রয়েছেন। এসডিএফ এনজিও উক্ত সমিতিতে অনুদান হিসাবে ১৫ লাখ টাকা দেন। ঐ টাকা সদস্যদের মধ্যে ঋণ হিসাবে বিতরণ করার কথা ছিল। সমিতির সভাপতি হাফিজা খাতুন, সাধারন সম্পাদক ফারজানা আক্তার ঝর্না ও ক্যাশিয়ার খালেদা আক্তার ৭৯ জনের নামে ভূয়া ঋণ দেখিয়ে ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা টাকা আত্নসাৎ করে। ভূয়া ঋণ নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ৮ মাস ধরে ঝগড়া বিবাদ চললেও বিষয়টি মিমাংসার জন্য আছিম ক্লাস্টার অফিসের কেউ এগিয়ে আসেনি। ২ মাস আগে সমিতির সদস্যরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম রব্বানীর শরনাপন্ন হন। মেম্বারের সহায়তায় সমিতি ঘরে সদস্য নিয়ে মিটিংএ ভূয়া ঋণের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
আছিম ক্লাস্টার অফিসের ইনচার্জ আইনুন্নাহার ভূয়া ঋণের বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব নেন। আজ পর্যন্ত ভূয়া ঋণের ১৩ লাখ টাকার কোন সুরাহা না হওয়ায় সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সদস্যদের অভিযোগ ৫ নছর ধরে সমিতি নিয়মিত পরিদর্শন করা হয় না। নিয়মিত মাসিক মিটিংও হয় না। হয় না অডিট।

৫২ হসজার টাকা ভূয়া ঋণ রয়েছে রোকেয়া স্বামী আঃ মজিদের, মুর্শিদা স্বামী মৃত আজাহারুলের নামে। তারা ভুয়া এ ঋনের খবর রাখেন না। আয়েশা নামে রয়েছে ২৭ হাজার টাকা ভূয়া ঋণ। কল্পনা আকতার ২০ টাকা জমা দিয়ে সমিতিতে ভর্তি হন। তিনি কোন সঞ্চয়ের টাকা দেন নাই। অফিসের ল্যাপটপে তার নামে ১৮ হাজার ১শ টাকা ভূয়া ঋণ লেখা রয়েছে।

১৩ লাখ টাকা ভূয়া ঋন সমিতির সভাপতি হাফিজা খাতুন চাপিয়ে দেন সাধারন সম্পাদক ঝর্নার উপর।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সমিতির সাধারন সম্পাদক ঝর্নার সাথে তিনি বলেন, তিন বছর আগে আমার বিয়ে হওয়ায় চাকরী ছেড়ে দিয়েছি। আমি চাকরী ছাড়ার সময় আছিম অফিসের ইনচার্জ আইনুন্নাহারের নিকট সমিতির হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছি। ক্লাস্টার অফিসের ইনচার্জ আইনুন্নাহার ও ঋন কমিটি ভূয়া ঋণ দিয়ে টাকা আত্নসাৎ করেছেন।

সমিতির ক্যাশিয়ার খালেদা আক্তার ভূয়া ঋণের কথা স্বীকার করে বলেন, ” আগেই লেখালেখির দরকার নাই। আমরা মিমাংসা করার চেষ্টা করছি।

আছিম ক্লাস্টার অফিসের ইনচার্জ আইনুন্নাহার বলেন, ” এত না কিছু ভূয়া ঋণ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছি। ৫ বছর ধরে সমিতি পরিদর্শন ও নিয়মিত মাসিক মিটিং ও অডিট না করার কারন জানতে চাইলে তিনি জনবল সংকটকে দায়ী করেন।

আছিম ক্লাস্টার অফিসের সি এফ ফারজানা ফেরদৌসী বলেন, সমিতির ঋণ কমিটি ঋণ দিয়েছে। তারা কাকে ঋণ দিয়েছে তারা ভাল বলতে পারবেন। ঋণ দেয়ার আগে তার অনুমোদন ছাড়া কেমনে ভূয়া ঋন উত্তোলন করা হল জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম রব্বানী জানান, তিনি বিষয়টি মিমাংসার করার চেষ্টা করেছেন। কিন্ত সমিতি কর্তৃপক্ষ কোন দায় না নেয়ায় ভূয়া ঋণের স্বীকার সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এত টাকা ভূয়া ঋণের বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেই হতবাক হয়েছি। অফিসের যোগসাজশ ছাড়া ভূয়া ঋণের নামে এত টাকা আত্নসাৎ হল কেমনে!

Share this post

scroll to top