প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা শেরপুরের মাহবুব ময়মনসিংহে গ্রেফতার

শেরপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতির চক্রের মুলহোতা মাহবুবকে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ পরিক্ষায় প্রক্সি দেয়ার সময় ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্র থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ কামাল আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মাহবুবব দীর্ঘ দিন থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে শেরপুরের মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান-মনিরসহ আরো একজনের নাম পাওয়া গেছে। আদালতে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।

শেরপুরে স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে সরকারি, আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতিসহ নানা ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত মাহবুব-মনির চক্রটি। শেরপুর জেলার চাকরি প্রার্থী বেকার যুবকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাকরি দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, তাদের দাপটের কারণে এলাকার মানুষ ভয়ে কথা বলতেও সাহস পায়না। দিনের পর দিন এ এলাকার মেধাবীরা প্রাপ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ফলে সবার মাঝে এক ধরণের ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসীর দেয়া প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, শেরপুর জেলার শ্রীবরর্দী উপজেলা সদরের মাহবুব এখন কোটি টাকার মালিক। তারসহযোগী একই উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের বালিয়াচন্ডি গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি আবুল কাসেমের ছেলে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (মনির) সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিগত ১০ বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে জালিয়াতি চক্রের হোতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে আরো ভয়ঙ্কর তথ্য মিলেছে। এলাকাবাসী জানায়, ২০১৬ সালে প্রক্সি দিতে গিয়ে একবার ধরা খেয়েছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। পরে মোচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের বাবা আবুল কাশেম একজন কাঠমিস্ত্রি। বছর পাচেঁক আগেও তিন বেলায় খাবার তাদের ঝোটতো না। ছেলের অবৈধ তেলেসমাতিতে রাতারাতি বদলে গেছে ভাগ্য। গত ৫ থেকে ৭ বছর আগেও থাকার ছোট্ট একটি ডেরা ঘর ছিল। এছাড়া থাকার জায়গাও ছিল না। নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন এ জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। কি নেই তার। গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। গ্রামের চারিপাশে বিগায় বিগায় জমিও ক্রয় করেছেন। এছাড়া শেরপুর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি। প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতির কারণে পাল্টে যায় মনিরুজ্জামানের জীবনাচরণ।

এলাবাসী আরো জানায়, বর্তমানে সরকারের কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইনেন্স ডিপার্টমেন্টে-ডিএএফসি পদে কর্মরত আছেন মনির। জালিয়াতি করে শুধু নিজে একাই চাকরি নেননি। তার স্ত্রী, ভাই, ভাই এর বৌ, বোন, বোন জামাইসহ পরিবারের সবার জন্য ব্যবস্থা করেছেন সরকারি চাকরি। তার স্ত্রী কনিকা, বোন কাজলী আক্তার ও বোন জামাই ময়েন আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজান সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারি। ছোট ভাই এর স্ত্রী সনিও সরকারি জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর- দেয়ানগঞ্জ, জামালপুরে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন।
অন্যদিকে চক্রের অন্যতম সদস্য শ্রীবরদী সদরের মাহবুব প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সি ও নিয়োগ জালিয়াতির প্রধান নিয়ন্ত্রক। একই সাথে দীর্ঘ দিন থেকে অবৈধভাবে মাহবুবও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শ্রীবরদী বাজারে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব মার্কেট। বিভিন্ন স্থানে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রয় করেছেন বলেও জানা যায়।

Share this post

scroll to top