প্রতিবেশীর মনোভাব ও আমাদের সার্বভৌমত্ব

ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মনে করা হয়। দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেক পুরনো। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিচ্যুতি ঘটেছে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রেরও। রাজনীতিতে উগ্রবাদের ডালপালা গজাতে গজাতে এখন স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ধস নামলেও অভিযোগের মাত্রাটা অন্তত আমাদের দেশের মতো নয়। কারণ, এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যেই ‘বিশ্বরেকর্ড’ করে ফেলেছি।

আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ‘ডিজিটালাইজড’ করতে গিয়ে এখন তা রীতিমতো ‘স্বয়ংক্রিয়’ হয়ে গেছে। ভোটারদের ভোট দিতে আর কেন্দ্রে হাজির হতে হয় না। প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার ‘নিশ্চিত’ করেছি আমরাই প্রথম। তাই ভারতের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অন্তত আমাদের জন্য খুব একটা শোভন নয়। তবে প্রতিবেশী হিসেবে রাষ্ট্রটির বৈশিষ্ট্য কিংবা প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

প্রশ্ন হলো, ভারত প্রতিবেশী হিসেবে কেমন বা দেশটি ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে কি না। বাংলাদেশকে নিয়েই বা এই বৃহৎ প্রতিবেশীর অবস্থান কী? অবশ্য আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা স্রোতের প্রতিকূলে গিয়েই এই প্রতিবেশীকে ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ কথার সাথে যারা একমত নন তাদেরকে বিভিন্ন অপবিশেষণে বিশেষিত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, কোনো প্রতিবেশীর সাথেই ভারতের সম্পর্কটা উষ্ণ পর্যায়ের নয়। আয়তনের দিক থেকে একমাত্র চীন ছাড়া আর কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রই ভারতের চেয়ে বড় বা সমকক্ষ নয়।

সামরিক শক্তি-সামর্থ্যরে দিক দিয়ে যেসব দেশ ভারতের সাথে পাল্লা দিতে পারে সেসব প্রতিবেশীর সাথে দেশটির সম্পর্ক ‘অহি-নকুল’ পর্যায়ের। বিশেষ করে চীন ও জন্মশত্রু পাকিস্তানের সাথে। যারা সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তিতে সমকক্ষ নয়, তাদের সাথে দেশটির সম্পর্কটা অনেকের মতে, প্রভু-ভৃতের মতোই। কিন্তু অতীতে যা-ই হোক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো প্রতিবেশীই ভারতের এই একচ্ছত্র খবরদারি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপÑ এমনকি ভুটানের মতো অতিক্ষুদ্র এবং শক্তিহীন রাষ্ট্রও ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশ সফলও হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে নেপাল সফল বলা চলে।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিদ্বেষী না হলেও বেশির ভাগ মানুষ ভারতের কর্তৃত্ববাদবিরোধী। কারণ, আমাদের অতি চড়াদামে কেনা স্বাধীনতাকে কেউ ভেংচি কাটুক, এটা স্বাধীনচেতা জাতির পছন্দ নয়। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করলেও পরবর্তী সময়ে দেশটি বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। স্বাধীনতার পর উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলোর সম্মানজনক নিষ্পতি হয়নি, বরং যা হয়েছে তা সবই একতরফা।

গঙ্গার পানি বণ্টনে ত্রিশসালা পানিচুক্তি হলেও চুক্তিমোতাবেক বাংলাদেশকে পানি দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া ভারত একতরফাভাবে ৫২টি অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি থেকে বঞ্চিত করেছে। ‘রাজ্য সরকারের অসম্মতি’র কথা বলে আজো তিস্তা চুক্তিও করা হয়নি। কিন্তু এ চুক্তির মুলা ঝুলিয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেক কিছু আদায় করা হয়েছে। আমাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে তারা টিপাইমুখ প্রকল্পও গ্রহণ করেছেন। ভারত বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি; বরং সীমান্তে প্রায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডকে কেউ স্বাভাবিক মনে করে না।

বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে অনেক সমস্যার সমাধানের কথা বলা হলেও এসব থেকে বাংলাদেশ তেমন কিছুই পায়নি। বরং বৃহৎ এই প্রতিবেশীকে নিঃশর্তভাবে সবকিছু উজাড় করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের আত্মস্বীকৃতিও রয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। যে যুক্তিতে ভারত আমাদের থেকে ট্রানজিট আদায় করেছে সে যুক্তিতেই অতীতে পশ্চিম পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে এবং পরে বাংলাদেশ নেপালের সাথে যোগাযোগের জন্য ট্রানজিট চাইলেও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কথা বলে ভারত তা দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট আদায়ের সময় সে কথা স্মরণ করা হয়নি।

সরকার একতরফা ছাড় দিয়ে ভারতের কাছ থেকে বেশি কিছু আদায় করতে না পারলেও তারা দেশটিকে পরীক্ষিত ও অকৃত্রিম বন্ধু বলেই মনে করে। বিষয়টিকে নতুন করে উসকে দিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে তুলনা করে লোক হাসিয়েছেন। সম্প্রতি সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কাশ্মির ইস্যুতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে সরকার কোন পক্ষে অবস্থান নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘ভারতের পক্ষে’ অবস্থানের কথা জানিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছেন।

বস্তুত কাশ্মির ইস্যুতে উপমহাদেশের প্রায় সব রাষ্ট্রই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই কোনো পক্ষে, নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করেনি। এমনকি যারা কাশ্মিরের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে তারাও কথা বলছেন তৃতীয় পক্ষ হয়ে। কাশ্মির ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিঃসন্দেহে পড়শি দেশটির প্রতি অতিরিক্ত দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশই বলতে হবে। এটাকে কূটনৈতিক মহল মোটেই যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত মনে করতে পারছে না। এ দিকে সরকারের কেউ কেউ কাশ্মির ইস্যুকে দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্মানজনকভাবে দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান করেনি। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো তিনবিঘা করিডোর ও বেরুবাড়ী বিষয়ক জটিলতা। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ফলে উভয় দেশেই তাদের ছিটমহলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। চুক্তির সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি। বরং খাঁড়া অজুহাত তুলে বিষয়টি দীর্ঘ দিন অমীমাংসিত রাখে। শেষাবধি ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারত তিনবিঘা করিডোর এর সার্বভৌমত্বের হস্তান্তরের বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা দেয় এ শর্তে যে, একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ীর সার্বভৌমত্ব ভারতের হাতেই থাকবে। বিষয়টি ভারতের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রের, মনের সঙ্কীর্ণতা হিসেবেই বিবেচনা করা যায়।

এ দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে মনে করলেও এটা সমতার ভিত্তিতে হয়েছে, মনে করার বাস্তব কারণ নেই। অনেকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হলো, ভারত ক্ষমতাসীনদের বন্ধু, বাংলাদেশের নয়। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে ‘দিল্লির দর্শন’ আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর ভারত সরকারের একটি সাম্প্রতিক প্রস্তাব সে প্রশ্নকে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ত্রিপুরারাজ্যের রাজধানী আগরতলা বিমানবন্দরকে উন্নত ও বর্ধিত করতে বাংলাদেশের ভেতরে জমি ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে ভারত সরকার। সংবাদটি বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় এক সভায় প্রথম এ প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এরপর গত এক বছরে একাধিকবার বিভিন্ন মিটিংয়ে একই প্রস্তাব পেশ করেছে ভারত। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ভারত থেকে প্রকাশিত ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার ভাষ্যমতে, আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের কাছে ৫২ একর জমি চেয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। এ জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে রাজ্যসরকার। কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মোটেও দেরি করেনি।

বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা থাকলেও ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক বিপিন কান্ত শেঠ সংবাদমাধ্যমকে ব্যাপারটি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, অতিরিক্ত ৫২ একর জমি পেলে বিমানবন্দরের রানওয়ে বড় মাপের আন্তর্জাতিক রুটের এয়ারক্রাফট পরিচালনায় ব্যবহার করা যাবে। ত্রিপুরার বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রীও নিশ্চিত করে বলেছেন, বিষয়টি রাজ্যসরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্র এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিষয়টিতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত এবং সবাই একসাথে এ বিষয়ে কাজ করছে।’ যা হোক, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে, ভারতে সে দেশের বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।

বিষয়টি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বসংশ্লিষ্ট ও স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউই তা সহজভাবে দেখছেন না। একমাত্র বর্তমান সরকারসংশ্লিষ্টরা ছাড়া বাংলাদেশের কোনো মানুষই ভারতের এ প্রস্তাবকে মোটেই যৌক্তিক মনে করেননি। বরং বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবেও সরাসরি নাকচের পক্ষে দেশের মর্যাদাসচেতন মানুষ। কারণ, একটি দেশের বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য প্রতিবেশী দেশ জমি প্রদান করবে- এমন আবদার যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত নয় কিছুতেই। ভারতের এ আবেদন নিয়ে যখন সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সবকিছু অস্বীকার করে বললেন ভিন্নকথা।

তিনি সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য ভারত বাংলাদেশের কাছে জমি চেয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা মোটেই ঠিক নয়, বরং একটি অপপ্রচার মাত্র। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের কাছে কোনো জমি চায়নি। যে খবরটি আপনারা জেনেছেন, সেটা সম্পূর্ণ অসত্য। ভারত মূলত যেটা চেয়েছে, সেটা হচ্ছে ত্রিপুরা বিমানবন্দরের রানওয়েতে লাইটের কমপ্লিট ফেইজ পূরণ করতে বাংলাদেশের অংশে কিছু লাইট বসাতে।’ তিনি দাবি করেন, ‘লাইটের এই কমপ্লিট প্যানেলের যে দৈর্ঘ্য, সেটা বসানোর মতো জায়গা ভারতের অংশে না থাকায় তারা বাকি কিছু লাইট বাংলাদেশের অংশে বসানোর জন্য অনুরোধ করে একটি প্রস্তাব দিয়েছে।’

মূলত ভারত যে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের কাছে ভূমি ব্যবহারের নজিরবিহীন অনুমতি চেয়েছে তা দেশী-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এবং বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া থেকে খুবই স্পষ্ট। গণমাধ্যমে এসব খবর প্রকাশের সময় সরকারের পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদও করা হয়নি বরং বিষয়টির ‘সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে’ বলে জানানোর মাধ্যমে সরকার বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবেই এটা স্বীকার করে নিয়েছে বলা যায়। এমনকি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক বিবিসিতে বক্তব্য থেকেও বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন- ভূমি নয়, লাইট স্থাপনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু লাইট বসাতে গেলেই তো ভূমি ব্যবহারের বিষয়টি আসবে। কারণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগে আমাদের ভূমিতেই লাইটপোস্ট স্থাপন করা হবে। তাই মন্ত্রীপ্রবরের বক্তব্যকে কেউ স্বাভাবিক মনে করছেন না।

বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণই হোক, আর লাইট বসানো হয় হোক- উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করা হবে। আর সে জন্য অনুমতি বা সম্মতি দেয়া হলে তা হবে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের পুরোপুরি লঙ্ঘন। যে যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে তা যৌক্তিক মানদণ্ডে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিমানবন্দরের রানওয়ে যদি সম্প্রসারণ করতে বা লাইট বসাতে হয় তাহলে সে সম্প্রসারণের নিজস্ব কাজটা তাদের দেশের অভ্যন্তরে করতে সমস্যা কোথায়? ত্রিপুরা রাজ্যটি আগরতলা বিমানবন্দরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাহলে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর কোনো দরকার পড়ে না। প্রয়োজনে বিমানবন্দর অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। যেমন আমাদের ঢাকা বিমানবন্দর তেজগাঁও থেকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সমস্যাটা ভারতের আগরতলার অভ্যন্তরীণ। তাই সম্পূর্ণ সমাধানে বাংলাদেশের দুর্বলতার আয়েশি ব্যবহার না করে ভারত কর্তৃক অভ্যন্তরীণভাবেই করা উচিত বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

সার্বভৌমত্ব প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্যই মহামূল্যবান। সার্বভৌমত্বহীনতা কখনোই কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে না। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে কোনো সরকারের কোনো কিছু করা নিঃসন্দেহে এ জাতির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষে আবেগের বা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

smmjoy@gmail.com

Share this post

scroll to top