পারভেজ মোশাররফের ফাঁসির রায়

পেশোয়ার হাইকোর্টের চিফ জাস্টিস ওয়াকার আহমদ শেঠের আদালত পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আইএসপিআর প্রধান মেজর জেনারেল গফুর রায় প্রকাশের পর বলেন, “সেনাবাহিনীর সব ‘র‌্যাঙ্ক ও ফাইল’কে অনেক বেদনা ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে এই রায়।” দেশের একজন প্রেসিডেন্টকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই প্রথম। গফুর আরো বলেছেন, “সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোশাররফ ৪০ বছর দেশকে সেবা করেছেন। দেশের জন্য অনেক স্থানে যুদ্ধ করে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন; তিনি কিভাবে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হতে পারেন?” এই মেজর জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনগত দিক বিশেষ করে সংবিধানের ধারা ও মৌলিক অধিকার রায়ে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিচারকাজে সংবিধানের লঙ্ঘন অপরাধের শামিল।’

এই রায় ছিল অনেকটা অচিন্তনীয়। তবে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, মোশাররফের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে না। ইতঃপূর্বে বেনজির ভুট্টোকে হত্যার জন্য তার মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছিল। বহু বছর পর এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বেনজির হত্যার প্রমাণসহ দোষ স্বীকার করলে মোশাররফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছর শক্ত হাতে পাকিস্তান শাসন করেছেন। তিনি আরব আমিরাতে স্বেচ্ছানির্বাসনে ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমান পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা পারভেজের সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করেন। তারা চান না তাদের সাবেক এক সেনাপ্রধানকে ফাঁসির রশিতে ঝোলানো হোক। যদি এমন কিছু হয়, সেটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে এবং সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাকিস্তানে ইতোমধ্যে অনেকবার সামরিক শাসন জারি হয়েছে এবং রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী খুবই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। সে দেশে আদালতও মাঝে মধ্যে শক্তি জাহির করে থাকে। আদালত ও সরকার কয়েকবার ফ্রন্টলাইনে চলে এসেছে। তবে জনগণের ক্ষমতা তৃতীয় মাত্রায়। অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কিছু বিচারক সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত। মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। সেনাবাহিনীর জেনারেলরাও যে আইনের ঊর্ধ্বে নন, এই বার্তাও এর মধ্য দিয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সংবিধান স্থগিত এবং লঙ্ঘন করার জন্য সেনাকর্মকর্তাদেরও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, এটাই বড় কথা। সেনাবাহিনীকে বুঝতে হবে, আচরণের জন্য সংবিধানে তাদের কতটুকু সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছে। তথাপি সব সমীকরণ সব সময় শুদ্ধ হয় না।

শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনী চায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান মোশাররফের যেন ক্ষতি না হয়। সে ক্ষেত্রে মোশাররফকে বিশেষ বিচারালয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে হয়েছে বা রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে হয়েছে। হয়তো সেখানে মৃত্যুর রায় রদ হবে বা অন্য কোনো নির্দেশ আসবে। আগে জন-অসন্তোষ সত্ত্বেও পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন বিচারালয় থেকে সেনাবাহিনীর ক্যু’র পক্ষে একাধিক রায় এসেছে এবং সেনাবাহিনীর নির্দেশ ও ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং মোশাররফের বেলায়ও কোনো নমনীয় নির্দেশ আসতে পারে।

আইএসপিআরের ডিজি মেজর জেনারেল গফুর বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তার জন্য শপথ নিয়েছে। আমরা দেশের জন্য বিশেষভাবে গত ২০ বছর যা করেছি, অন্য কোনো দেশের সেনাবাহিনী তা অর্জন করতে পারেনি। আমরা এখন হাইব্রিড ওয়্যারের মুখোমুখি। আমরা শত্রুদের চিনেছি। তাদের সহায়তাকারীদের পরিচয় এবং কৌশলও জানতে পেরেছি।’ প্রেস কনফারেন্সে তিনি আরো বলেন, ‘দেশটা দেশের ভেতর ও বাইরের শত্রু দিয়ে আক্রান্ত। আমাদের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি করতে চায় অনেকে।’ ভারতীয় সেনাপ্রধানের উক্তিকে লক্ষ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে কাবু করার এটাই একমাত্র পথ। আমরা জানি কী করতে হবে। তবে আগে দেশ, তারপর সেনাপ্রতিষ্ঠান।’ মোশাররফ সংক্রান্ত রায় সম্পর্কে সরাসরি না বললেও রায়ের কিছু বিষয়ের তিনি সমালোচনা করেছেন। আদেশের এক স্থানে বলা আছে- ‘টেনে তাকে নিয়ে যাওয়া’ এবং ‘তিন দিন ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে রাখা।’ এসব কথা নিয়ে আইনজীবী এবং স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল আনওয়ার মনসুর খান প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। কিভাবে এমন লেখা হলো এবং কিভাবে তা প্রতিপালিত হবে? আইনমন্ত্রী আক্ষেপ করে বললেন, ‘প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলানো ইসলামী বিধানে নেই এবং সংবিধানেও নেই। এটা আদালতের একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি।’ ২০৯ আর্টিকেল অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল জজের বিচার চেয়ে বলেছেন, ‘এগুলো আদালতের ভুল অবজারভেশন।’ আইনমন্ত্রী ও আর্টিকেল ২০৯ ধারা মতে, সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিচার চেয়েছেন। ওই ধারায় মূলত ‘অযোগ্যতা’ ও ‘মানসিক অক্ষমতার’ উল্লেখ রয়েছে। ফেডারেল সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিচারক ওয়াকার আহমদ শেঠির বিচার পরিচালনার যোগ্যতা নেই মর্মে একটি আবেদন ফাইল করানো হবে। এতে বরং বিচার প্রশাসন মজবুত হবে। শেঠির কথাবার্তায় প্রমাণিত হয়েছে, তিনি ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’। এ বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে জরুরি আবেদন করা হবে। আইএসপিআর প্রধান মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেন, ‘যে শব্দমালা রায়ে ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মানবতা, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং অন্য যেকোনো মূল্যবোধের বিরোধী।’
উল্লেখ্য, গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো উন্নত ও অর্থবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নওয়াজ শরিফ রক্তপাতহীন ক্যু’র মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে মোশাররফ কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। অভিযোগ আছে, নওয়াজ শরিফ ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি এই সহাবস্থানকে ‘নিরাপত্তার কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সাথে তিনি কাশ্মির সমস্যাকে রণাঙ্গনে নিতেও অস্বীকার করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, এভাবে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা আস্তে আস্তে গৌণ হয়ে যাবে। মনে রাখা দরকার, মোশাররফের বিদায় ঘটেছে ২০০৭ সালের আইনজীবীদের আন্দোলনের ফলে। বর্তমানে চিফ জাস্টিস আসিফ সাঈদ খোসা কিছু শর্ত দিয়ে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদে আইন পাস করিয়ে কোনো সেনাপ্রধানের দ্বিতীয় মেয়াদ অনুমোদনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। পাকিস্তানের স্বাধীন মিডিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সেনাবাহিনী আগের মতো সুবিধা করতে পারছে না। রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপ এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণকে পাকিস্তানিরা ভালো চোখে দেখছে না। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাই চিন্তিত।

পারভেজ মোশাররফ অবসরপ্রাপ্ত ‘ফোরস্টার জেনারেল’। তিনি পাকিস্তানের দশম প্রেসিডেন্ট, নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। করাচিতে আসার পর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে ভারতের বিপক্ষে তিনি যুদ্ধ করেছেন। উল্লেখ্য, কাশ্মিরের সিয়াচেন যুদ্ধের সময় মোশাররফ ছিলেন কর্নেল। তিনি কমান্ড লাইনে ছিলেন। সব কিছু অনুকূল থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধে ভারতের কাছে পরাজিত হন। এ নিয়ে দেশে তার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তখন বেনজির ভুট্টো সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা শুধু নিজ দেশের জনগণের ওপর ক্ষমতা দেখাতে পারে।’ এ নিয়ে বেনজির ও মোশাররফের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। বেনজিরকে হত্যার পর এই বিরোধ মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। কারগিল যুদ্ধে সমালোচিত হন মোশাররফ। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পর নওয়াজ শরিফকে করাচি বিমানবন্দরে নামতে বাধা দিয়ে সেনাবাহিনী নওয়াজের বিরুদ্ধে নামে। নানা ঘটনাপ্রবাহের পর মোশাররফ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন এবং ২০০১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। নওয়াজ শরিফের পক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করে ছিল; সেই মামলায় তাকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়।

মোশাররফ লাহোর আপিল ডিভিশনে আপিল করে বলেছেন, ‘রায় অবৈধ, এখতিয়ারবহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থী। কেননা, বিচার প্রক্রিয়ায় আর্টিকেল ৪, ৫, ১০, ১০ক ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। শুনানি শেষে লাহোর হাইকোর্ট বিশেষ আদালত গঠনকে ‘সংবিধানবহির্ভূত’ বলেছেন। আরো দেখা যায়, আর্টিকেল ৬ ধারা মতে, মামলা করতে হলে কেবিনেটের অনুমোদন দরকার। মোশাররফের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়ার বিষয় কখনো কেবিনেটে উত্থাপিত হয়নি। তদন্তের জন্য ২০ জন কর্মকর্তার দল গঠন করা হলেও আদালতে মাত্র একজন সাক্ষী দিতে হাজির হয়েছিলেন।

তখনকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক পানি ও বরফের মতো মিশে গেছে, যেমন নওয়াজ শরিফের প্রশাসন ও অ্যাডমিরাল ফসিহ বুখারির ঐক্য। তখন আইএসআই, সেনা প্রশাসন, মিলিটারি পুলিশ, জেনারেল জিয়াউল বাটের অনেক বিষয়ে মতানৈক্য হয়েছে। শরিফ ও তার ভাই গৃহবন্দী হলেন। সেনাবাহিনী সব মিডিয়ার ওপর কর্তৃত্ব করেছে। প্রচার করা হয় শরিফকে ‘ডিসমিস’ করা হয়েছে। চিফ জাস্টিস সাঈদুজ্জামান সিদ্দিকির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট এই কাজকে ‘Doctrine of necessity’ বলে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল। মিলিটারি কোর্ট শরিফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ২০০০ সালে জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ এবং লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির অনুরোধে মোশাররফ নওয়াজের ক্ষমা ঘোষণা করেন। পারভেজ মোশাররফ প্রেসিডেন্ট রফিক জোরপূর্বক নিজের অনুকূলে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছেন। তিনি ২০০২ সালে জালিয়াতিপূর্ণ রেফারেন্ডামের আয়োজন করেন। ২০০৮ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টি, মুসলিম লিগ (নওয়াজ), আওয়ামী পার্টি ও জমিয়াতে ওলামায়ে ইসলামের সম্মিলিত গণবিক্ষোভ, জনরোষ এবং ইমপিচমেন্টের ভয়ে তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। এরপর ২৩ নভেম্বর ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডে নির্বাসনে চলে যান।

ভারত অভিযোগ করে আসছিল, যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মির ও সিয়াচেন প্রশ্নে পাকিস্তানের পক্ষে থেকে সব সময় ভারতকে চাপ দিয়েছে। আসলে ভারত নিজের স্বার্থেই এতদঅঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক ফ্রন্ট খুলে বসেছে। এক সময় মোশাররফ আরো বেশিদিন পাকিস্তানের ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে থাকা এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে প্রয়োজন বলে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করলেও তাকে ‘অসময়ে’ বিদায় নিতে হয়েছে।

যা হোক, পাকিস্তানের সার্বিক বিষয়ে সেনাবাহিনী সব সময় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং ভারতবিরোধী মনোভাবের জন্য সেনাবাহিনী পাকিস্তানে জনপ্রিয়। পাকিস্তানের প্রায় প্রতি পরিবারের কোনো একজন সদস্য সেনাবাহিনীতে রয়েছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের ‘পাওয়ার পলিটিক্স’ পাকিস্তানকে নাজুক করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় উন্নয়নের যে আশার আলো দেখা গেছে, সেটি যেন আবারো কলুষিত না হয়; সেজন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সচেতন নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। একই সাথে, অর্থনৈতিক সূচকগুলোও ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।

সন্ত্রাস দমন নিয়ে পাকিস্তান সব সময় চাপে ছিল এবং এখনো আছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলেও ভারত বড় সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। প্যারিস-ভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স পাকিস্তান যে ‘আসলেই সন্ত্রাস দমন করছে’ তা প্রমাণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এই খাতে পাকিস্তানকে সব অর্থ দেয়া মার্কিন প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে এবং সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ বলতেন, ‘গুড বয়, ভালো করেছ। আরো কাজ বাকি।’ পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং সেখানে অনেক জঙ্গি গোষ্ঠী রয়েছে। তাই পাকিস্তানে সামরিক শক্তিধর ব্যক্তির চেয়ে জনগণের পছন্দের নেতৃত্ব এবং সংবিধানের শাসন দরকার বলে বোদ্ধারা মনে করছেন। জেনারেলদের উচিত, একত্রে বসে কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া এবং জনগণের চাহিদা ও অধিকারকে সম্মান করা। পাকিস্তানে অনেকগুলো ভূরাজনৈতিক ইস্যু সক্রিয়, এসব যেন পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান না করে।
বিশ্বের এক বিস্ফোরণোন্মুখ এলাকায় পাকিস্তানের অবস্থান। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেশটাকে সব সময় তাড়িত করেছে। নাইন-ইলেভেনের সময়ে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেখানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সব পক্ষকে পরিশ্রম করতে হয়েছে। সিভিল-মিলিটারি সমঝোতা, অর্থনৈতিক সূচকের উন্নয়ন এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলো এখন সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার

Share this post

scroll to top