পাকিস্তানকে পাশে নিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকা

নয়া দিল্লির সাউথ ব্লকের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) বাতাসে একটা রসিকতা ইদানীং ভেসে বেড়াচ্ছে। সেটা কী? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তেমন নজর কাড়া কিছু করতে পারেননি ইমরান খান; কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক করে ইসলামাবাদে ফেরার পর তাকে দেখাচ্ছে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মতো!

এই রসিকতার সাথে মিশে রয়েছে ভাতের জন্য গভীর দুশ্চিন্তাও। মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ক, এমনটাই মনে করছেন কূটনীতকর বিশেষজ্ঞরা। কাশ্মিরে মধ্যস্থতা নিয়ে ট্রাম্পের উপর্যুপরি চাপ তো রয়েছেই। উদ্বেগ আরও বেড়েছে, ইমরানকে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মন্তব্য থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি বলেছেন যে, পাকিস্তানের সাথে তার সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভারত। সমস্যা মেটানোর জন্য যতটা পারবেন করবেন, এমন কথাও ইমরানকে বলেছেন ট্রাম্প।

প্রকাশ্যেও গত দশ দিনের মধ্যে দুই বার ট্রাম্প বলেছেন, কাশ্মির নিয়ে মধ্যস্থতা করতে তিনি আগ্রহী। দুই বারই ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, কাশ্মির সমস্যায় দ্বিপাক্ষীয় সমাধানই একমাত্র পথ। কিন্তু এই জেদ ভারত কতদিন বজায় রাখতে পারবে সেটিই দেখার বিষয় কারণ কাশ্মির নিয়ে এমন অভূতপূর্ব চাপ সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিম বিশ্ব থেকে কখনও আসেনি। তা হলে এর পরিণতি কী? ভারতের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইমরানের হাত শক্ত করে ধরে, তবেই কাশ্মির নিয়ে মধ্যস্থতার কথা তুলছে হোয়াইট হাউস। যেটি ভারতের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।

ভারতের পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করছে, গোটা কাশ্মির প্রসঙ্গটিই এখন বিপজ্জনক এবং স্পর্শকাতর জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথমত, সুনামীর মতো এই মার্কিন চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত আর যা-ই করুক, বেশি দিন কাশ্মির নিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে পারবে না। আজ হোক বা কাল অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে বসতেই হবে।

গত দুই দিন উপত্যকায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়ার সাথে ট্রাম্প সরকারের কাশ্মির নিয়ে প্রবল চাপের কোনও কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, কাশ্মিরে নতুন করে বিশৃঙ্খলা হলে সেটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলবে। তখন সেই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রম্প মধ্যস্থতার জন্য যে প্রস্তাব বারবার করছেন, সেই চাপ তখন অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোকেও পাশে নেওয়ার চেষ্টা করবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এর পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে ধরে নিয়েই সীমান্ত এলাকায় শক্তি জোরদার করছে ভারত।

পাশাপাশি আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার কী চুক্তি হয়, এবং পাকিস্তান কতটা সহায়তা ওয়াশিংটনকে করতে পারে তার উপরেও অনেকটাই নির্ভর করছে কাশ্মিরের ভবিষ্যত পরিস্থিতি। এক কূটনৈতিক কর্মকর্তার মতে, ‘ভারত ও পাকিস্তান যদি দ্বিপাক্ষীয়ভাবে কাশ্মির সমস্যার সমাধানের পথে কিছু দূর এগোতে না পারে, উল্টে উত্তেজনা ও হিংসা বাড়ে, তা হলে তৃতীয় পক্ষের হাত বাড়ানোর মতো ক্ষেত্রটি জোরালো হবে। ট্রাম্পের বারবার করে মধ্যস্থতা করার কথা বলা এ জন্যই খুব অর্থবহ।’

Share this post

scroll to top