পরিচয়হীন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুজিতের বাড়ি ময়মনসিংহের কোথায়?

ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সুজিত নন্দী নামের ময়মনসিংহের এক টগবগে যুবক বগুড়ার সান্তাহারে শহীদ হন। সান্তাহার শহরের পূর্বদিকে পশ্চিম সিংড়া রেলগেট (বর্তমানে পূর্ব ঢাকা রোড) এ এান্টি ট্যাংক মাইন বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে শহীদ হন সুজিত। কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুজিত নন্দীর স্বজনদের খোঁজ মেলেনি গত ৪৮ বছরেও। পরিচয়হীন হয়েই তাঁকে শহীদের মর্যাদা নিতে হচ্ছে। গত ৪৮ বছরে সুজিত নন্দীর কোথাও কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। সুজিত নন্দীর সাথে যারা যুদ্ধ করেছিলেন, তারা শুধু জানতেন সুজিত নন্দীর বাড়ি ময়মনসিংহে। এর বাইরে আর কিছুই কেউ জানতেন না।

’৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়। সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের ঘাঁটি থেকে রেলপথে হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী। তাদের পথরোধ করতে হবে। উড়িয়ে দিতে হবে রেললাইন। সে অনুযায়ী সান্তাহার শহরের পূর্বদিকে পশ্চিম সিংড়া রেলগেট (বর্তমানে পূর্ব ঢাকা রোড) এ এান্টি ট্যাংক মাইন বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে শহীদ হন সুজিত। এর আগেরদিন তারা হানাদার মুক্ত করেন আদমদীঘি সদর। ৭নং সেক্টরের ৬৮নং দলের কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা সান্তাহার শহর মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় পাকি সেনারা সান্তাহার থেকে মিটার গ্রেজ লাইনে ট্রেন যোগে প্রচ- বেগে গুলি করতে করতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে এগিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারাও প্রচ- প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বহন করা ট্রেনটি সান্তাহারে ফিরে আসে। সান্তাহার সড়ক ও জনপথ কারখানা বিভাগে থাকা পাকিস্তানী সেনা ঘাঁটি থেকে প্রচ- বেগে গোলা ছুড়তে থাকে। যে কোন সময় তারা রেলপথে হামলা করতে পারে, এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেয় সান্তাহার থেকে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করতে রেললাইন বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে ফেলা হবে। সে কঠিন কাজটির দায়িত্ব নেন, ওই টিমের বোমা-বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা সুজিত নন্দী। ৬৮নং দলের কমান্ডার এল.কে আবুল হোসেনের পরামর্শে দু’টি বোমা রেলের লাইনে লাগানো হয়। প্রথমটি ভালভাবেই বিস্ফোরিত হয়। উড়ে যায় লাইনের এক ধারের বেশ কিছু অংশ। দ্বিতীয় মাইনটি বিস্ফোরণ করতে তারের মাথা টান দেয় সুজিত। কিন্তু মাইন বিস্ফোরণ হয়নি। কেন এমন হলো দেখতে কাছে যায় সুজিত। ঠিক সে সময় মাইনটির বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সুজিতের দেহ। তার মরদেহ নেয়ার মতো অবশিষ্ট কিছু ছিল না। ৬৮নং দলের কমান্ডারসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুজিত নন্দীর বাড়ি ময়মনসিংহে। সে ছিল স্নাতক পাস।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে সান্তাহার এলাকায় ৬৮নং দলের হয়ে যুদ্ধ করেছে। এছাড়া বিস্তারিত কোন কিছু জানা ছিল না সুজিত সম্পর্কে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৬৮নং দলের কমান্ডার এল.কে আবুল হোসেন বলেন, সুজিতের কাঁধে সব সময় একটা ব্যাগ ঝোলানো থাকত। সেই ব্যাগে আমাদের দলের সব সদস্যদের নাম, ঠিকানা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ব্যাগ সুজিতের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া দেহের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে তার বিস্তারিত পরিচয় আর মেলেনি। তবে সরকারীভাবে ভারতে খোঁজ নিলে তার সঠিক পরিচয় হয়তবা মিলতে পারে। সে সময় সুজিতের বয়স ২৪-২৫ বছরের মতো ছিল। ফর্সা, লম্বা, ছিপছিপে ধরনের শহীদ সুজিত ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পর তার কোন কোন সাথী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সুজিতের স্বজনদের খোঁজে ময়মনসিংহে এসেছিলেন কিন্তু শুধু নাম আর দেহের বর্ণনা দিয়ে তারা কোন স্বজনের সন্ধান করতে পারেননি।

Share this post

scroll to top