পদ্মা সেতু হলে দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নীত হবে : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন এবং সেতুর রেল সংযোগ নির্মাণ ও মাওয়া প্রান্তে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের পর এক সুধী সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি একথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি আছে ৭ দশমকি ৮৬ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে বাড়বে আরও ১ দশমিক ২ শতাংশ। আর রেল সেতু হয়ে গেলে মোট প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ শতাংশ। ফলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ করতে চলেছি। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বিশ্বে প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রতিশ্রুত অর্থায়নে বিরত থাকে। এ অবস্থায় বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে যারা এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল, যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিল, তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু লোক আছেন যারা দেশের স্বার্থ দেখে না, নিজেদের স্বার্থ দেখে।’ এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ হারানোর পর তিনি পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন। এদের কোনো দেশপ্রেম নেই। এরা নিজেদের স্বার্থ দেখে দেশের স্বার্থ দেখে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং তাদের জীবনযাত্রার  উন্নয়ন হবে।

প্রকল্পের কর্মযজ্ঞে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প। সেতুটির নির্মাণ কাজ টেকনিক্যাল, সময়সাপেক্ষ ও চ্যালেঞ্জিং। গুণগতমান শতভাগ রাখার স্বার্থে আমরা ধৈর্য ও সর্তকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি।’

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাবা, মা, ভাই— সব হারিয়েছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হবো।’

এ সময় তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চল। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নির্ধারণ করেছি। এই প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অনেক উন্নয়ন হবে।”

সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে অন্যদের মধ্যে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বক্তব্য দেন।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে রোববার সকাল ১১টার দিকে মাওয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top