পদত্যাগী সেই ভিসি নাসিরের মূল চাকুরী ময়মনসিংহের কোথায়!

‘আমি এখানকার ভিসি কিন্তু আমার মূল সরকারি চাকরি তো ময়মনসিংহে, আমারে এই সরকার আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানিয়ে দিবে, নয়তো বিদেশে পাঠিয়ে রাষ্ট্রদূত করে দিবে, নয়তো মন্ত্রী করে দিবে। আমারে তো আর সরকার মুদির দোকান দিয়ে বসিয়ে দিবে না। ভদ্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছি তো এজন্য তোরা কিছু ঠিক পাস না।’

এভাবেই কথা বলছিলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পদত্যাগী ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। তবে তার মূল চাকুরী ময়মনসিংহের কোথায় তা এখনও জানা যায়নি।

এদিকে এমন একজন বিতর্কিত শিক্ষক রাষ্ট্রদূত, নয়তো মন্ত্রী, নয়তো আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবে এরকম কথা শুনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বহিষ্কার করে ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। এরপরে শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের উপাচার্যের কার্যালয়ে ডেকে এনে ভিসি নাসির অকথ্য ভাষায় কথা শোনায় এবং অপমান করে। সেই কথোপকথনের একটি অডিও কিছুদিন আগে ফাঁস হয়।

ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায় ভিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘জানোয়ারদের কথা শুনলে মরা মানুষ তাজা হয়ে যায়। তোদের বাপরা আর মায়েরা চালাক এই ইউনিভার্সিটি। আমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। তোর চৌদ্দ পুরুষ ধরে স্বার্থক আমি কয়টা ছিট বাড়াইছি দেখে তোরা চান্স পাইছিস। কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো? কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে ভালো চলে?’

বেশিরভাগ সময়ে মেয়েদের অপমান করে পদত্যাগী ভিসি নাসির কথা বলতেন। তারও কিছু প্রমাণ অডিওতে পাওয়া যায়। ক্লাসের মেধাবী শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তুই মেধাবী, কে কি করলো না করলো তা নিয়ে তোর মাথা ব্যথা কেন? এই জানোয়ার তুই তো কাজের মেয়ে, তুই তো মেয়ে মানুষ, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললেই পারতিস।আমার এমনিতেই রাগ বেশি। তোদের দেখে আমার রাগ আরও বাড়তেছে।তোরা জন্ম নিছিস কাদের ঘরে? তোর বাপদের ভিসি বানা।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলায় এক শিক্ষার্থীকে ভিসি বলছেন, ‘এ জানোয়ার তোরে তো লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করছে। তোর আব্বার মনে হয় এটা কিন্ডারগার্টেন? তোর আব্বার থেকে ছোট করে দেখালে একটু খুশি হইস তাই না? লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দিবো, এ জানোয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয় কিসের কিন্ডারগার্টেন? ভিসি ওর বাপের চেয়ে ছোট এজন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্ডারগার্টেন বলছে।’

এরপর এক শিক্ষার্থীকে তিনি বলছেন, ‘তোর বাপ নাকি কলেজের শিক্ষক তারে বাপ বলে ডাকার ইচ্ছা করে তোর? তোর বাপরে বাপ বলে ডাকিস? পছন্দ হয়? তোর বাপের চেয়ে ভালো বাপ আছে না?’

একজন অভিভাবককে বলতে শোনা যায়, ‘একটা বাজে ছেলের মা, আপনি কোন কথা বলবেন না।’

অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলছেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নেতারা বহিষ্কার হইছে আর তুমি তো কোথাকার কি? ক্লাসরুম নোংরা নিয়ে কেন তোমরা ফেসবুকে কথা বলবে? এরা মানুষ হবে না। অমানুষ হবে?’

এরকম স্বৈরাচারী ব্যাবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেন খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। এই সমস্ত কাজের বিরোধীতা করেছেন যে সমস্ত শিক্ষক তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখতেন তিনি। আর এই সমস্ত অপকর্মে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষককে ব্যবহার করতেন। শিক্ষকরা সহযোগিতা করতে না চাইলে তাদেরও অপমান করতেন।

এদিকে খোন্দকার নাসিরউদ্দিন এবং তার সহযোগীদের এই খারাপ আচরণের শাস্তি দাবি করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলেন, ‘এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। আমাদের ওপর খুব চাপ ছিলো তাই কাউকে কিছু বলতে পারিনি। আমাদের সঙ্গে তিনি যে আচরণ করেছেন তা ছিলো অমানবিক।’

আরও পড়ুন: কমলনগরে মেঘনার তীব্র ভাঙন

এদিকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে এমন আচরণ কোন শিক্ষক করতে পারেন কিনা সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন মোঃ আবদুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কখনই এই সমস্ত ভাষায় কথা বলা উচিত না।সাধারণ মানুষ আশা করে একজন শিক্ষকের আচরণ শিক্ষকসুলভই হবে।’

Share this post

scroll to top