নেত্রকোনায় বন্যায় মানুষের হাহাহার, পাচ্ছে না ত্রাণ

 ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলাসহ ১০ উপজেলার ৬৩ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। অসংখ্য পুকুর পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলা। বন্যায় গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১৪ লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে, তাদের হাহাকার চলছে। বানভাসি সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তারা প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন না।

এখনো অন্তত ১৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কলমাকান্দার উব্দাখাল নদী ও খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন, জেলার ছোটবড় সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করছে। তবে উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখনো ৩২৯ আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত এক লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ জন মানুষ রয়েছেন। তবে সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও সুপেয় পানি না থাকায় ত্রাণের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। এ ছাড়া পানিবন্দি এলাকাতেও দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত ৮টার পর থেকে পানি কিছুটা কমছে। উপজেলার এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ছয় হাজার ৭২৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তার মধ্যে দুই হাজার ৬২০ জন নারী, ৮১০ জন শিশু ও ৮২ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন।

মদনের ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, পানি ধীরগতিতে কমছে। এখনো উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা ডুবে আছে। আশ্রিতদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, নেত্রকোনা জেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ নগদ টাকা, ৩৩৩ টন চাল ও চার হাজার ৯৫০ প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বন্যাদুর্গত লোকজনের মাঝে ১৩১ টন চাল, তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকা ও দুই হাজার ৩০০ শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

Share this post

scroll to top