‘নির্বাচনে থাকা নির্ভর করছে সরকার ও ইসির উপর’

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভুমিকার উপর নির্ভর করছে বলে আবারও মন্তব্য করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা তাদের ৩২ দফা ইশতেহারে বলেছেন, বামপন্থীরা জয়ী হলে রুটিন কাজের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন,নিরপেক্ষ ও কার্যকর সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলতে সংবিধানের ১১৮(১) ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ণসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী ইশতেহার উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন এবিষয়গুলি তুলে ধরা হয়। পুরানা পল্টনস্থ (২ কমরেড মণি সিংহ সড়ক) মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন. রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ (মার্কসবাদী)’র নেতা মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধরণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ।

ইশতেহারে আরো বলা হয় বাম জোটের প্রাথীরা জয়ী হলে সংসসদের ভেতরে বাইরে তারা এ( ইশতেহারের বর্নিত) বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করবেন। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুসহ জোটের ৫৪দফা সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমুল সংস্কার করবে তারা। না ভোটের বিধানও চালু করবেন তারা। ভোটদানে বাঁধা দিলে শাস্তির বিধান করবে বলেও ইশতেহারে রয়েছে। মেহনতি ও দরিদ্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বাধাগুলি দুর করবে তারা। পর্যায়ক্রমে সব প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের প্রচারণা কাজে সরকারি অর্থে ও ব্যবস্থপনায় পরিচালনা করবে। এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ বনাঞ্চল সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ বন্ধ করা, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করবে তারা।

ইশতেহারে আরো বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান,রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগে ব্যক্তিকেন্দিকতার বিপদ পরিহার করতে যৌথতা ও জবাবদিহিতার বিধান আরো স্পষ্ট করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক অগথান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর সাংবিধানিক ভিত্তি পরিবর্তন করা। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা এবং বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে তারা। সব রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচার করার ঘোষণা রয়েছে এতে। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টারসহ বিচারবহিভূত হত্যাকান্ড, গুম, খুন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নীতি রয়েছে তাদের ইশতেহারে।

এদিকে লিখিত বক্তব্যে মো: শাহ আলম নির্বাচনী আচরণবিধির বেপোরোয়া লংঘনের বিষয়ে এপর্যন্ত দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশ ও জনপ্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছে না। দৃশ্যত তারা এখনও সরকারের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারছে না। এটা অনুমান করা মোটেও কঠিন নয় যে, সরকার তার সাজানো ছকেই ৩০ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়। একারণে মানুষের মধ্যে এখনও গভীর উদ্বেগ রয়েছে যে তারা নিরাপদে ও বিনা বাধায় ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি-না? জনগণের এ আতঙ্ক ও এক প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নুন্যতম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা টিকিয়ে রাখতে বাম আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে বেছে নিয়েছে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নির্ভর করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভুমিকার উপর।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top