নাশকতার মামলায় হেফাজতের কারও নাম নেই

হেফাজতে ইসলামস্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘটিত নাশকতা ও তাণ্ডবের ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় হেফাজতের কোনও নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় ঘটনার বর্ণনা থাকলেও আসামি সব অজ্ঞাত। হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলাই হয়নি।

পুলিশ বলছে, ঘটনা তদন্ত করে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরই আসামি করা হবে। বর্তমানে পর্যালোচনা চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হেফাজতের আড়ালে জামায়াত-বিএনপি এই হামলা করেছে বলেও কোনও কোনও পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

ঢাকায় তিন মামলায় হেফাজতের কারও নাম নেই

ঢাকায় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকাল পর্যন্ত তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গত ২৫ মার্চ মতিঝিল থানায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অবশ্য ভিপি নুরকে আসামি করা হয়নি। মামলায় হেফাজতের কাউকেও আসামি করা হয়নি।

এছাড়া যাত্রাবাড়ী থানায় গত শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাতেও তিন চার হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হলেও সেখানেও হেফাজতের কারও নাম নেই। তবে এই থানায় চার জন হেফাজত কর্মী গ্রেফতার আছে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলেছে।’

পল্টন থানায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেখানেও পাঁচ/ছয় হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে হেফাজতের কারও নাম নেই।

সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ের নাশকতার ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো থানা পুলিশ ও ডিবি তদন্ত করছে। যারা অনলাইনে উসকানি দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল অ্যাক্টেও মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

অতীতে দায়ের করা হেফাজতের মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলাগুলোর তদন্ত অনেক অগ্রসর হয়েছে। মামলায় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো প্রমাণের অপেক্ষায় হয়তো এতদিন মুলতবি ছিল। তবে সেগুলো আমরা শেষ করে এনেছি। শিগগিরিই হয়তো একটি পর্যায়ে আসবে।’

হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চার জনের মৃত্যু হয়। তবে ওই ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশীদুল হক জানান, ওই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচ মামলা
গত ২৬ মার্চ বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে হামলা ভাঙচুর, রেল স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও মৎস্য ভবনে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় অজ্ঞাত প্রায় পাঁচ/সাত হাজার জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় পাঁচটি মামলা করেছে। এ ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে রবিবারের তাণ্ডবের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।

সোমবার (২৯ মার্চ) ১১টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, এসব ঘটনা তদন্ত করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পাঁচ মামলা

হেফাজতের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, সানারপাড় ও শিমরাইল এলাকার মহাসড়কে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে মামলায় হেফাজতের কাউকে আসামি করা হয়নি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, হরতালে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭টি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, হেফাজতের নামে এসব হামলা জামায়াত ও বিএনপি করেছে।’

Share this post

scroll to top