নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ না করায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে রুমের ভেতর ডেকে নিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের রাজনীতি না করায় রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সদ্য চালু হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর সোমবার সকালে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে রেফার করেন।তার সহপাঠীরা বলেন, নিহাদকে রাত দেড়টার পর ডেকে নিয়ে গিয়ে পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়ে সে বেশ কয়েকবার বমি করেছে।

রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো লিখিত বক্তব্যে নিহাদ জানান, আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার হাতে রামদা ধরা হয়৷ খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেয়ানো হয়। আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।

তিনি আরও জানান ‘ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ভাই আমাকে হলে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সাথে সাথেই আমাকে থাপ্পড় মারে নাট্যকলা বিভাগের হিমেল ভাই। আমার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন ভাই, ২০১৪-১৫ সেশনের মুমিন ভাই, ইইই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির ভাই, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীর ভাই সহ আরো ৫/৬ জন টানা লাথি ঘুষি মারতে থাকে। সাথে ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) ভাই লাথিঘুষি মারতে থাকে। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক মেরেছে নাঈম ভাই। আমি কেন রাকিব ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি নাকি অন্যদেরও রাজনীতি করতে বাধা দিয়েছি, যা ভিত্তিহীন। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নাই। একপর্যায়ে নাট্যকলার হিমেল ভাই আমার হাতে রামদা দিয়ে আমাকে যাযাবর নাঈম ভাইয়ের কাছে রাজনীতি করবো বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলে। এরপর আমার প্রোফাইলে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড দেয়ানো হয়, যা আমি পরে ডিলিট করি। একটি ভিডিও বানায় হাতে রামদা দিয়ে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকতে পারবে না। কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব ভাই চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মত মরবি।

এনিয়ে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের দরজা আটকে আন্দোলন করছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা।

এবিষয়ে হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমি আজ সকালে জানতে পেরেছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। হল সম্পর্কিত আমার এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে সে বিষয়ে আমরা তোমাদের দাবি পূরণ করবো।’

প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘ আমাদের ২৪ ঘন্টা সময় দাও। আইন দ্বারা আমরা যা করতে পারবো তা আগামীকাল দুপুরে এই সময়ে আমরা তোমাদের সামনে উপস্থিত হবো।’

Share this post

scroll to top