নজরদারিতে ১২ ভিআইপির ব্যাংক হিসাব

ক্লাবের নামে জুয়া, ক্যাসিনোসহ অসামাজিক, অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে কেন্দ্র করে একডজন ভিআইপির ব্যাংক হিসাব নজরদারিতে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ভিআইপির নামে-বেনামে থাকা অর্থ যাতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে যাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে তাদেরই ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলমান অভিযানে যারাই আইনের আওতায় আসছেন তারা সরকারদলীয় ও অঙ্গসংগঠনের উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মী। সুতরাং তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করার আগে অনেক কিছুই বিবেচনায় নিচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে আটক তিনজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফকিরেরপুলের আলোচিত ইয়ংমেন্স ক্লাবের সভাপতি খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়া, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জি কে বিল্ডার্সের কর্ণধার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং কৃষকলীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ। তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের পাশাপাশি তাদের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা ব্যাংকে কোনো অর্থ মজুদ আছে কি না এবং বিগত দিনে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে তার তথ্য পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে কী পরিমাণ লেনদেন হয় তার তথ্য নিতে পারে বিএফআইইউ। কোনো সন্দেহজনক লেনদেন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাংক লেনদেনের স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করতে পারে। আদালতের নির্দেশ পাওয়া গেলেই কেবল ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থায়ীভাবে স্থগিত করতে পারে। তবে, এর আগে বিএফআইইউ থেকে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাব স্থগিতাদেশ চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতে আবেদন করেছিল। আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দেয়ায় জি কে শামীমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে স্থগিত রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। বাকি দুইজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হচ্ছে না। একই সাথে প্রায় একডজন ভিআইপির ব্যাংক হিসাবের লেনদেনে সতর্ক হতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে প্রতিটি ব্যাংকের আলোচিতদের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। একই সাথে বিএফআইইউ আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী ও মানিলন্ডারিং বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বিএফআইইউ তা অনুসন্ধান করে। সম্প্রতি এসব অপরাধে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের হিসাবও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএফআইইউ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেব লেনদেনে সাময়িক স্থগিতাদেশ করা যায়। প্রথমে এক মাসের জন্য; পরে তা সাত মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা যায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আদালতের নির্দেশনা এনে স্থায়ীভাবে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জুয়া ও ক্যাসিনোর মতো অবৈধ ও অসামাজিক কাজে যারাই লিপ্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে, কৌশলগত কারণে অনেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে ওইসব ব্যক্তির হিসাব সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে যেন কোনো প্রকার অর্থ উত্তোলন করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শুধু ক্যাসিনোর মতো অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িতরাই নন, টেন্ডরবাজ, চাঁদাবাজসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িতরাও এ তালিকায় রয়েছে।

এ দিকে জি কে শামীম ও তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিচ্ছে কি না তার সন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। ইতোমধ্যে কর সার্কেল থেকে আয়কর নথি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইসিতে তলব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর জি কে শামীমের কর ফাঁকির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এমপি শাওন সম্রাটের ব্যাংক হিসাব তলব : যুবলীগ নেতা ও সংসদ সদস্য (এমপি) নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল সোমবার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী ও ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাটের নামে কোনো হিসাব অতীতে বা বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে সে হিসাবের যাবতীয় তথ্য (হিসাব খোলার ফর্ম, কেওয়াইসি, ট্রানজেকশন, প্রোফাইল, শুরু থেকে হালনাগাদ বিবরণী) জরুরি ভিত্তিতে এনবিআরে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাতে হবে।

Share this post

scroll to top