ধর্ষিতা শিশুর মায়ের আহাজারি

‘আমার মা কই। তোমরা আমার মায়েরে ফিরায়া দাও। কে আছো আমার পাশে, দেখ আমার মা (ব্যানারের ছবি দেখিয়ে) সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কোথায় আমার সরকার। আমারে সাহায্য করতে বলো। আমি আমার মায়ের ধর্ষণকারীর বিচার চাই, ফাঁসি চাই। আসামির হয়ে সবাই আমারে হুমকি দেয়, টাকা নিয়া পুলিশও আসামির পক্ষে কথা কয়। আমার কেউ নাই, আমি কী করুম, কার কাছে বিচার চামু।’ এভাবেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাথে গতকাল বিলাপ করছিলেন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার দুই বছরের শিশু আয়েশা মনির মা রাজিয়া সুলতানা।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকের বিচার দাবি করেন। তিন শিশুসন্তান নিয়ে অবস্থানের পুরো সময়টাই তিনি চিরতরে চলে যাওয়া সন্তানের স্মৃতিচারণ করে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। অনেকে এসে তার আর্তনাদ থামাতে পারেননি। অবশেষে পুলিশ অনেক বুঝিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে তাকে গেণ্ডারিয়ায় বাড়িতে পাঠায়।

এর আগে রাজিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যাকারী এলাকায় খুব প্রভাবশালী। তাকে পুলিশ আটক করলেও সে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে তার স্বামী মো: ইদ্রিস তাকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। অবশেষে তিনি স্বামীর অগোচরে এখানে এসেছেন। তার ধারণা ধর্ষকের বিচার হবে না। সে যেকোনো সময় বের হয়ে তার এবং সন্তানদের ক্ষতি করবে।

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় শিশু আয়েশা মণিকে। মা-বাবা ও তিন বোনের সাথে থাকত শিশুটি। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যেতেন। এ সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনের গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্য দিনের মতো বিকেলে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া নাহিদ (৪৫) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে ভবনের তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ইদ্রিস আলী বাদি হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এরপর নাহিদকে আটক করে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার এসআই হারুন অর রশিদ। নাহিদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু পরে নাহিদ জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম নিবারা খায়ের জেসি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top