দেশের জন্য কাজ করতে যেয়ে করোনায় আক্রান্ত হলেন শেরপুরের সাবেক এসপি

First day of CV-19 Positive‘আমি আনসেভ থেকেছি বা আমাকে আনসেভ থাকতে হয়েছে, দেশের মানুষের জন্য, ফোর্সের জন্য। আজ আমি করোনা পজিটিভ হওয়ায় মোটেও আশ্চর্য হইনি।’ কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রংপুর রেঞ্জের রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম। তিনি গত বুধবার করোনা শনাক্ত হন।

বৃহস্পতিবার মেহেদুল করিমের ব্যবহৃত ফেসবুক চার চ্যারিটি ফর চাঞ্জ পেজটি ভিসিট করার সময় সেখানে ১৭ ঘণ্টা আগে তার আপলোড করা একটি ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর নিজের মানসিক দৃঢ়তা প্রকাশ করে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, প্রাথমিক অবস্থায় করোনা পজিটিভ হওয়া সম্পর্কে নিজের সন্দেহ থেকে আগাম কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নিজের মনোবল কীভাবে ধরে রাখতে হবে। আর কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

ভিডিওর বক্তব্যের শুরুতেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে দেশে ও বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা যারা তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া কামনা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মেহেদুল করিম বলেন, ‘পুলিশ ক্যান ডু এ্যাভরিথিং। চাকরিতে ঢুকেছি এই বিশ্বাস করে যে, পুলিশ অনেক কিছু করতে পারে। এই ক্রান্তিলগ্নে এসে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বিশ্বাস হলো। আমরা এ সাহস কোথা থেকে পেয়েছি- তা নিজেরাই জানি না।’

প্রথম অবস্থায় করোনায় আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শরীরে প্রথমে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে জ্বর এল। তারপরই বুঝে গেলাম সামথিং ইজ হ্যাপেনিং মাই বডি। সাথে সাথে আইসোলেটেড হয়ে গেলাম। এছাড়া পরিবারের সবাইকে আইসোলেটেড করেছি। এছাড়া আমার স্ত্রীকে বলেছি- আমার খাবার দূর থেকে দিতে। পরে এ বিষয়টি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আমার ভাইকে জানাই। তারপরই রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করে।’

ভিডিওর বক্তব্যের এক পর্যায়ে করোনা পজিটিভ হবেন এমন ধারণার কথা উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বুধবার বিকেলে নিশ্চিত হলাম আমি করোনা পজিটিভ। এরপর বাসার সবাইকে আলাদা করে দিয়েছি। এ বিষয়ে ইমোশনাল হওয়ার কিছু নেই। এসময় তিনি অন্যদের কেউ একই পথ অবলম্বন করার ইঙ্গিত করেন। এছাড়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে লেবু পানি ও আদা পানির গারগল করার কথা বলেন।’

সুস্থ হওয়ার বিষয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষকরা এবং তার ফার্মাসিস্ট বন্ধুরাও তাকে সাজেশন দিচ্ছেন বলে জানান।

সকলের ভালোবাসা ও দোয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠবেন আশা প্রকাশ করে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও দেশে আক্রান্তদের উদ্দেশে মেহেদুল করিম বলেন, ‘আপনারা মানসিকভাবে শক্ত হন- এটা কিছু না। করোনাকে কেয়ার করা যাবে না। করোনাকে আমরা কেয়ার করব না। আমরা কেয়ার করব- নিজের সেফটি। পরিবারের সদস্যদের সেফটি। করোনা প্রতিরোধে আমাদের এই বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। মানতে হবে- আমাদের কি কি করতে হবে।’

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘জানি না করোনা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। তবে জ্বর সারাতে প্যারাসিটামলসহ অন্যান্য ওষুধপত্র খাচ্ছি।’

ডায়াবেটিস আছে, তাই একটু ভয় হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপরও আমি ভয় পাচ্ছি না। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে শুভাকাঙ্ক্ষীদের তাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন।’

সূত্র জানায়, মেহেদুল করিম ২০১৬ সালে শেরপুর থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি একই পদে শেরপুরে প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। কর্মদক্ষতা ও সদালাপনের জন্য তিনি এখনও শেরপুরে প্রশংসিত। তার সময়ে শেরপুরে পুলিশ লাইন্স একাডেমি নামক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে শিশুরা যেমন আধুনিক শিক্ষায় গড়ে ওঠছে, তেমনি বেকারত্ব ঘুচেছে অনেকের। এছাড়া তিনি জেলা পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনার আধুনিকায়তন করেন এবং পুলিশ বাহিনীর কাজ গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

চাকরি করতে গিয়ে তিনি কুড়িগ্রামেও সুনাম কুড়িয়েছেন। কুড়িগ্রাম থেকে তার বদলি ঠেকাতে ২০১৯ সালের ১৭ জুন খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা রংপুর মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। এ সময় সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীসহ তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে শেরপুরের অনেকেই আবেগ আর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।

আপলোড হওয়া ওই ভিডিও পেইজ-এ অনেকেই উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।

এমডি জাকারিয়া ইসলাম নামে একজন কমেন্ট বক্স-এ লেখেন- করোনা পজিটিভ আপনি? খবরটা শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। আমার খুব পছন্দের মানুষ আপনি একজন ভাইয়া। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। ইনশাল্লাহ, ভাইয়া এই যুদ্ধেও জয়ী হয়ে ফিরবেন আপনি। আমাদের সকলের দোয়া আছে আপনার সাথে। ইনশাল্লাহ।’ এমডি হাসান নামে একজন লেখেন, ‘স্যার, আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া। ইনশাআল্লাহ আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনি শেরপুর জেলার এসপি ছিলেন। আপনার সময়ে শেরপুর পুলিশ লাইন স্কুল গড়ে উঠে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি- আপনি ও আপনার মতো যারা অসুস্থ আছেন, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।’

তথ্য মতে, মেহেদুল করিমের জন্ম ১৯৭৩ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম (ফার্ম) কোর্স সম্পন্ন করেন। বিসিএস-এর ২০তম ব্যাচের এই মেধাবী ২০০১ সালে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন।

https://web.facebook.com/charcharityforchange.com.bd/videos/185404002577147/

Share this post

scroll to top