দিল্লিতে মুসলমান হত্যা ও সহিংসতার প্রতিবাদে সারাদেশে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল

country wide protest muslim killing in Indiaদিল্লিতে মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শাখা।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদী হিন্দুরা যে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন আর বর্বরতা দেখিয়েছে তাতে শুধু মুসলমানরাই নয়, বিশ্বের শান্তিপ্রিয় প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই নৃশংস ঘটনায় অর্ধ শতাধিক মানুষ নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে বেছে বেছে হামলা ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বর্বরতায় একজন বৃদ্ধা জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন। বহু মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের মিনারে হনুমানের পতাকা উড়ানো হয়েছে। রাজপথে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে। মুসলিম মহিলাদের প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হয়েছে। আর এই সব বর্বরতা চালানো হয়েছে পুলিশের সামনে ও অনেক ক্ষেত্রে তাদেরই সহায়তায়। ভারত সরকার চলমান এই নৃশংসতার বিপরীতে জোড়ালো কোন প্রতিবাদ দেয়নি বা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতে প্রমাণ হয় মোদি সরকারের মদদেই মুসলিম নিধনে নেমেছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। এটা কোনভাবেই কোন সভ্য রাষ্ট্রের পরিচয় হতে পারে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মুসলিমবিরোধী হওয়ায় গত কয়েকদিন যাবত ভারতের বিভিন্ন স্থানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে প্রতিবাদী আন্দোলন করছে মুসলিমসহ বিবেকবান অন্যান্য নাগরিকগণ। চলমান এই আন্দোলনে একতরফা এবং অতর্কিত হামলা চালালে আন্দোলনকারীরা প্রতিরোধী অবস্থান নেয়। ফলে ব্যাপক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ইতোপূর্বে এ আইনটি নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ১০০ আবেদন জমা পড়ে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি শান্তিপ্রিয় হিন্দুরাও এ আইনটি মেনে নেয়নি। নাগরিকত্ব সংশোধন আইনটি ভারতের জনজীবনকে অশান্ত করে তুলেছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ভারতে মুসলমানরা উদ্বাস্তু নয় বরং তারা ভারতের নাগরিক এবং সভ্য ও আধুনিক ভারতের কারিগর। প্রায় ৮০০ বছর যাবত মুসলমানরা ভারতকে গড়েছে। দখলদার ব্রিটিশদের বিতাড়িত করতে লক্ষ লক্ষ মুসলিম জীবন দিয়েছে। আজও ভারতের উন্নতি অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক মুসলমানরা। সুতরাং এখন কোন সা¤প্রদায়িক আইন দিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের তাড়ানোর ষড়যন্ত্র সফল হবে না। অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। হামলাকারী উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনটি বাতিল করতে হবে। একই সাথে আমরা ভারতের মজলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

প্রতিবাদ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর
দিল্লিতে মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রগতী স্বরণীতে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি মাহমুদ মুরাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পশ্চিম
দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মিরপুর-১ নম্বর থেকে শুরু হয়ে আনসার ক্যাম্পের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় মহানগর সভাপতি এনামুল হক, সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মারুফসহ মহানগরের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর মহানগর
ভারতের দিল্লিতে ভয়াবহ মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির রংপুর মহানগর শাখা। সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক সামিউল ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে মিছিল সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এসময় মহানগর সভাপতি আশিকুর রহমান ও সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা মহানগর
দিল্লিতে মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির খুলনা মহানগর শাখা। সকাল ১০টায় মহানগর সেক্রেটারি মোশাররফ আনসারীর নেতৃত্বে নগরীর ময়লাপোতা এলাকা থেকে শুরু হয়ে নিরালা এলাকায় গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় মহানগর অফিস সম্পাদকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
ভারতে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে মিছিল সমাবেশ করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা। দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও দাওয়াহ সম্পাদক রাজিবুর রহমান পলাশের নেতৃত্বে বিক্ষোভটি রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে জুরাইন চৌরাস্তায় গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে মহানগর সভাপতি রাসেল মাহমুদ, সেক্রেটারি নোমান শিকদারসহ শাখার বিপুল-সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে।

সিলেট মহানগর
দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখা। সকাল ১০টায় মহানগর সভাপতি মামুন হুসাইনের নেতৃত্বে নগরীতে মিছিল সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এসময় জেলা পূর্ব সভাপতি রুকনউদ্দিন, জেলা পশ্চিম সভাপতি মিজানুর রহমান, মহানগর সেক্রেটারি সাইফুল ইসলামসহ মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share this post

scroll to top