তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানো মোবাইল টাওয়ার অপসারণে সমীক্ষা প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর বিকিরণের (রেডিয়েশন) বিষয়ে সমীক্ষা করে চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি’কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসাথে ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারাগার, খেলার মাঠ ও ঘন জনবসতিপূর্ণ জায়গা থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর বিকিরণ (রেডিয়েশন) ছড়ানো টাওয়ার সরাতে আদেশ দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। পাশাপাশি এ মামলাটি চলমান থাকবে বলেও আদালত বলেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো: ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।

পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘২০১২ সালে একুশে টেলিভিশনের তৎকালীন প্লানিং এডিটর ও বিশেষ প্রতিনিধি হারুন উর রশীদের করা ‘একুশের চোখ’ অনুষ্ঠানে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এরপর এ ধরণের প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করি।’

ওই রিটের শুনানি নিয়ে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসাথে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কয়েকটি মোবাইল ফোন টাওয়ার পরিদর্শন করে রেডিয়েশন বিষয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গবেষণা করে জানায়, দেশে ব্যবহৃত টাওয়ারে নিঃসৃত বিকিরণ আন্তর্জাতিক মাত্রার তুলনার বেশি। এরপর এ নিয়ে একটি গাইডলাইন করতে নির্দেশ হয়েছিলো। সে অনুসারে বিটিআরসি একটি গাইডলাইন করে আদালতে দাখিল করেছিলো। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে অন্তত পাঁচবারের চেষ্টায় সে গাইডলাইন সংশোধন করা হয়েছিলো।’

তিনি আরো বলেন, এ মামলার শুনানিতে আমরা ভারতের দুটি রায় আদালতে দাখিল করেছি। সেখানে আমরা বলেছি আমাদের দেশের টাওয়ারের রেডিয়েশনে যে মাত্রা রয়েছে তা দশ ভাগের একভাগে কমিয়ে আনতে হবে।’

আদালতের আদেশ অনুসারে একটি প্রতিবেদনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তা (রেডিয়েশন) খুবই উচ্চমাত্রার এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে প্রতিবেদনে সব মোবাইল অপরারেটর এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে (বিটিআরসি) এই তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কমাতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

এছাড়াও আদালত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেয়। ওই কমিটিতে বিজ্ঞানী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদের রাখতে বলা হয়। এ কমিটিকে মোবাইল টাওয়ার থেকে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশগত প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এরপর সে রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার রায় দিলেন হাইকোর্ট। রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসাথে সমীক্ষা করে দেশের টাওয়ারগুলোর ক্ষতিকর রেডিয়েশনের বিষয়ে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে সমীক্ষা প্রতিবেদন দেখে আদালত ক্ষতিকর রেডিয়েশন ছড়ানো মোবাইল টাওয়ার অপসারণের বিষয়ে আদেশ দিবেন বলেও মন্তব্য করেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top