ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ : ধর্ষকের চেহারার বর্ণনা পেয়েছে পুলিশ

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতা। ওই হাসপাতালের গেট থেকে ১০০ গজ উত্তরে, গল্ফ ক্লাবের আগে যাত্রী ছাউনির পেছনের ঝোপে রোববার রাতে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী।

তিনি তার এক বন্ধুর বাসায় ‘গ্রুপ স্টাডির’ জন্য যাচ্ছিলেন। ক্যান্টনমন্টে থানা এলাকায় এয়ারপোর্ট রোডের কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে অল্প কিছু দূর এগিয়ে গেলে ধর্ষক তাকে পেছন দিক দিয়ে মুখ চেপে ধরে। এরপর যাত্রী ছাউনির পেছনের ঝোপে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের পর ওই ছাত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেই তার বন্ধুর বাসায় যান অটোরিকশায় করে।

এরপর রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তিনি এখন চিকিৎসাধীন আছেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও আক্রমণের চিহ্ন আছে। এরইমধ্যে অজ্ঞাত একজনকে আসামি করে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর টেলিফোন পেয়ে রাতে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক। তিনি সেখানে পাঁচ ঘন্টা ছিলেন। তিনি জানান, ছাত্রীটির ব্যাগে অতিরিক্ত কাপড় চোপড়ও ছিলো। সে বন্ধুর বাসায় পড়াশোনার জন্য যাচ্ছিল। তার হাঁপানির সমস্যা রয়েছে। ঐ ছাত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী, ধর্ষক তার মুখ ও গলা চেপে ধরে। তাকে একাধিবার ধর্ষণ করা হয়। এরপর ব্যাগ থেকে তার নতুন কাপড় বের করে পরানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষক উন্মত্তের মতো আচরণ করে বলে সে আমাকে জানিয়েছে।”

আরেকজন শিক্ষক জানান, ‘‘ধর্ষকের চেহারার যে বর্ণনা ছাত্রীটি দিয়েছে তাতে তার শারীরিক গঠন, গায়ের রঙ, বয়স, হেয়ারস্টাইল এসব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। তা পুলিশকেও জানানো হয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি ধর্ষক সুস্থ, স্বাভাবিক এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী।”

পুলিশ সোমবার ধর্ষণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছ। পুলিশ জানায়, আলামত ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে, ছাত্রীটি ধর্ষকের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।
গুলশান বিভাগের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ‘‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমের পরিধেয় কাপড় চোপড়, লেখার খাতার ছেড়া কাগজ, ইনহেলার, চুড়িসহ আরো তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র উদ্ধার করেছি।”

তিনি জানান, ‘‘ভিকটিম নিজেই একজন ধর্ষকের কথা বলেছেন। আমরা এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। ধর্ষককে চিহ্নিত করতে প্রযুক্তির সহয়তা নিচ্ছি। আর গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমেও অপরাধীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাহান হক ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর প্রাথমিক জবানবন্দি নিয়েছেন। তিনি জানান, ‘‘তিনি (ছাত্রী) তার সাধ্যমত ধর্ষকের চেহারা ও শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিয়েছেন। পুরো ঘটনাও তার কাছ থেকে শুনেছি। তার বর্ণনা মতে ধর্ষক যে শক্ত সামর্থ্য তা বলা যায়। কিন্তু বাকি বর্ণনা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আর ধর্ষক একজনই বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একাধিক টিম মাঠে আছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অপারেশন চালাচ্ছি। আমরা আশা করি দ্রুতই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারব।”

এদিকে এই ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার প্রায় সারাদিন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। শাহবাগ এলাকা অবরোধ করা হয়। দুপুরের পর কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর জানিয়েছেন, ‘‘আমরা ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ধর্ষককে চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তার না করলে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে।”

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা দিনের আলোয়ও নিরপদ নয়, রাতেও নিরপদ নয়। আর সব বয়সের নারীই এখানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেয়েটিকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর ধর্ষণ করা হয়েছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হচ্ছি। কিন্তু নারীর নিরাপদ ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়নি।” ডয়চে ভেলে।

Share this post

scroll to top