ঢাকায় বিস্ফোরণ: স্বজনদের আহাজারি, কান্নায় ভারি হাসপাতাল

রাজধানীর মগবাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ও আহত স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতাল এলাকা। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে সাতজন মারা যান।

এ ঘটনায় আহতদের রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের খবর দেখে হাসপাতালে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজছেন অনেকে। সূত্র জানিয়েছে, আহতদের অনেকে ছিলেন পথচারী।

শিশুকন্যা সুবাহানা এবং স্ত্রী জান্নাতকে হারিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহাজারি করছিলেন সুজন। জরুরি বিভাগে ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বারবার তিনি বলছিলেন, আমার বউ-মেয়ে সব শেষ। আমার আর কেউ নাই রে, তোরা কে কোথায় আছোস হাসপাতালে আয়।

সুজন জানান, বিকালে স্ত্রী জান্নাত মোবাইলে তাকে জানিয়েছিলেন মেয়ে সুবাহানা ও ছোট ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজারে শর্মা হাউজে কর্মরত এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারা আর ফিরল না।

মগবাজারে বিস্ফোরণে আহত শিক্ষার্থী শাহ নেওয়াজ বলেন, বাসেই বসে ছিলাম। হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ। একটু পর দেখি ভাঙা গ্লাসের বিভিন্ন অংশ লেগে শরীর কেটে-ছিঁড়ে গেছে। আশপাশের অনেকেই রক্তাক্ত। মনে হলো মুহূর্তের মধ্যে কোনও ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে।

রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণ সাতজন নিহত, আশপাশের সাতটি ভবন ও তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এটা নাশকতা কী না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতা হলে সেখানে বোমার বিস্ফোরণ হতো, স্প্লিন্টার পাওয়া যেত। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হতো। কিন্তু বাসে কোনো স্প্লিন্টারের কণা পাওয়া যায়নি। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায় গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে, বোমার কোনো ঘটনা এখানে নাই।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যা ৭ টা ৩৪ মিনিটে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা জানার জন্য কমিটি গঠন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

তিনি জানান, ভবনের নিচতলায় ফাস্ট ফুডের দোকান, দ্বিতীয় তলায় শো রুমে ফ্রিজ ছিল। তিন তলায় ছিল একটা স্টুডিও। ভবনের সামনের সড়কে কাজ চলছে। সেখানেও গ্যাস ও ইলেকট্রনিক তার রয়েছে। কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।

Share this post

scroll to top