ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো রেডিও তেহরানের পুরস্কার বিতরণী ও আলোচনা সভা

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার রেডিও তেহরানের বাছাই করা শ্রোতা, ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন, মনিটর, সাংবাদিক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে একটি সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ- পিআইবি’র অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সম্মিলনীতে অ্যাডমিন ও মনিটরদের পাশাপাশি রংধনু আসরে সাক্ষাৎকারদাতা শিশু-কিশোর বন্ধুদের পুরস্কৃত করা হয়।

রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের পরিচালক মুজতবা ইব্রাহিমির ব্যক্তিগত আন্তরিকতা ও উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ শ্রোতা সম্মিলনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আগত শ্রোতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় নিযুক্ত রেডিও তেহরানের বিশেষ প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এ মিলনমেলা শুরু হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে। তেলাওয়াত করেন হাফেজ মনোয়ারুল হক জামালী। এরপর শ্রোতা ও পাঠকদের সামনে নিরপেক্ষভাবে বিশ্বের খবরাখবর তুলে ধরার ক্ষেত্রে রেডিও তেহরানের অবদান নিয়ে নিজের কথা ও সুরে গান পরিবেশন করেন উত্তরণ রেডিও শ্রোতা ক্লাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রিমন।

রেডিও তেহরানের সাংবাদিক মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শ্রোতা সম্মিলনীতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রেডিও তেহরানের কথাবার্তা অনুষ্ঠানের বিশ্লেষক আব্দুল আউয়াল ঠাকুর, সাংবাদিক শাহনাজ বেগম, সাংবাদিক ও কবি আমিন আল-আসাদ, কবি রহমান মাজিদ, নাট্যাভিনেতা ইসমাইল এইচ খান, রেডিও তেহরানের সাংবাদিক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম ও মোহাম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম।

বক্তরা বর্তমান সময়ের একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট গণমাধ্যমের ভিড়ে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আব্দুল আউয়াল ঠাকুর বলেন, তার চার দশকের সাংবাদিকতা জীবনে কথাবার্তা অনুষ্ঠানে বিশ্লেষণ করতে এসে শ্রোতাদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছেন সেরকম সাড়া আর কোনো সংবাদ মাধ্যমের অডিয়েন্সের কাছে পাননি।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর বিপ্লবের বাণী বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ছড়িয়ে দিতে এবং বিশ্বের আনাচে কানাচে নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর খবরাখর প্রচার করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং- আইআরআইবি’র বিশ্ব কার্যক্রম। ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা- আইআরআইবি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচারের উদ্যোগের সে ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলা বিভাগের সম্প্রচার শুরু হয়।

সত্য, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ বিশেষ করে বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সংবাদ প্রচার করায় শুরু থেকেই মানুষের মনে স্থান করে নেয় রেডিও তেহরান। ৮০ ও ৯০’র দশকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শ্রোতাদের কাছে অনুষ্ঠান পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বেতার শর্টওয়েভকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। রেডিও তেহরানও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে আন্তর্জাতিক বেতারগুলো নানামুখী মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরগুলোতে অনেক মানুষ যে এখনো শর্টওয়েভের মাধ্যমে আন্তরিকতার সঙ্গে রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠান শুনে যাচ্ছেন সেকথা উঠে আসে শুক্রবারের এ শ্রোতা সম্মিলনীর বক্তৃতায়।

রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠানের সঙ্গে পরিচয় এবং তারপর থেকে নিয়মিত এ অনুষ্ঠান শোনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন জামালপুরের নীড় ইউনিট ডিএক্স ক্লাবের সভাপতি এম সবুজ মাহমুদ, ফ্রেন্ডস ডিএক্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সেনা সদস্য সোহেল রানা হৃদয়, কুমিল্লার শ্রীয়াং রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের সভাপতি সোহাগ পারভেজ, গাজীপুরের ডিএক্স রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের সভাপতি ফিরোজ আলম, গোপালগঞ্জের শ্রোতা ও অ্যাডমিন সাইফুল খান, ঢাকার শ্রোতা মেহেদি হাসান প্রমুখ।

তারা রেডিও তেহরানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রশংসা ও গঠনমূলক সমালোচনা করেন এবং অনুষ্ঠানের উৎকর্ষ ও বিকাশের জন্য মূল্যবান পরামর্শ দেন।

বর্তমানে বয়সে তরুণ এসব শ্রোতার অনেকেই জানিয়েছেন, শিশুকালে বাবার সঙ্গে সন্ধ্যার পর উঠানে পাটি পেতে সেই যে রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠান শোনা শুরু হয়েছিল আজো তা চলছে। অনেকে এই রেডিও থেকে শিশু-কিশোরদের জন্য সম্প্রচারিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান রংধুনর শ্রোতা ছিলেন। ছাত্র জীবন শেষ করে তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করে আজো তারা রেডিও তেহরান শুনে যাচ্ছেন নিয়মিত।

শ্রোতা সম্মিলনীতে জানানো হয় বর্তমানে রেডিও তেহরান থেকে ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বাংলা বিভাগ সবার শীর্ষে রয়েছে। এই বিভাগের ওয়েব সাইটের পাঠক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান খান রেডিও তেহরানে কাজ করার বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সংবাদ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে শ্রোতাদের কানে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায় বর্ণনা করে তিনি বলেন, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নানারকম কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যেও রেডিও তেহরানের খবর শোনাকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করেছেন।

সম্মিলনীর শেষ পর্যায়ে রংধুন আসরে সাক্ষাৎকারদাতা বন্ধু নাদিয়া নুর, আরাফাত খান, কাজী জাওয়াদ বিন হাসান (লাবিব), কাজি রাইনয়ান বিন হাসান ও তানহাকে পুরস্কার দেয়া হয়। সেইসঙ্গে সভাপতি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন রেডিও তেহরানের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন ও চিফ মনিটর ফিরোজ আলম, সাইফুল খান, আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ ও হাসান বিন নজরুল। এছাড়া, শুভেচ্ছা উপহার গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানে আগত সবাই।

সম্মিলনীতে মোবাইল ফোনের অ্যাপের মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য যোগ দেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিয়মিত শ্রোতা, অ্যাডমিন ও মনিটর মোহাম্মাদ নাজিমউদ্দিন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শ্রোতা ও মনিটর ডা. শাহিনুর আলম, দিদারুল ইকবাল, আবদুল কুদ্দুস মাস্টার, সাইফুল ইসলাম থান্দার ও সালাহউদ্দিন ডলারসহ অনেককে স্মরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সাংবাদিক ও কণ্ঠশিল্পী জিহাদ রায়হান।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top