ডা: স্বামীর মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন

ডাক্তার স্ত্রীর নির্যাতনে ডাক্তার স্বামীর মৃত্যু! ঘটনার শিকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা: রাজন কর্মকার। তিনি খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা। ডা: রাজনের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী মজুমদার রূপা বিএসএমএমইউর জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রাজনকে তার স্ত্রী প্রায়ই নির্যাতন করতেন বলে বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের মধ্যে বিয়ের পর থেকেই আলোচনা হতো। কিন্তু এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতেন না বিভিন্ন কারণে। তাদের বিয়ে হয় গত বছর। জানা গেছে, এর আগেও একজনের সাথে ঘর করেছেন ডা: কৃষ্ণা।

গত শনিবার রাত ৩টায় ডা: রাজনকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলে জানা গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত অবস্থায়ই গ্রহণ করে। এ ঘটনায় রাজনের মামা প্রথমে ধানমন্ডি এবং পরে তেজগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয়নি। তদুপরি গতকাল স্কয়ার হাসপাতাল থেকে একদল দুর্বৃত্ত রাজনের লাশ জোর করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ময়নাতদন্ত করার দাবি উঠলে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ডা: রাজনের সহকর্মী ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির চিকিৎসক এবং সরকারদলীয় চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকেরা বাধা দিলে ডা: রাজনের লাশ নিয়ে যেতে পারেনি। সকাল থেকে ডা: রাজনের বন্ধু শুভাকাক্সক্ষী, সহকর্মী এবং আত্মীয়স্বজনেরা স্কয়ার হাসপাতালে জড়ো হন এবং প্রতিবাদ করছিলেন।

নিহতের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, রাজন শনিবার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে রাত ১১টা পর্যন্ত কোনো এক রোগীর অপারেশন করেন সহকর্মীদের সাথে নিয়ে। এরপর সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে রাত ১২টার পর বাসায় ফিরেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৩টায় রাজনকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এই তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে এমন কি ঘটনা ঘটল যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন? এটা নিয়ে রাজনের সহকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে তুমুল আলোচনা চলছে।

এ দিকে রাজন প্রায়ই তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হতেন বলে তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন। এর আগে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বেশ কয়েকবার এবং রাজনকে পপুলার ও সিরাজুল হক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। চিকিৎসার সময় রাজনের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এসব নিয়ে ডা. রাজনের আত্মীয়স্বজনেরা অথবা রাজন নিজেও সুস্থ হওয়ার পর মুখ খোলেননি। আত্মীয়স্বজন ও তার সহকর্মীরা আগের ঘটনার কারণে সন্দেহ করছেন যে রাতে হয়তো আবার রাজনকে নির্যাতন করা হয়।

এদিকে রাতে জানা গেছে, ডাক্তার রাজনের লাশের ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজনের ভাই অভি জানিয়েছেন, তার ভাই ও বৌদির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। কোনো কোনো সময় তা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করত।
ডা: রাজনের ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: কাজী বিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি নিজে খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদারের সাথে কথা বলেছেন। ময়নাতদন্তের ব্যাপারে মন্ত্রী নিজেও রাজি হয়েছেন। বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা: কনক কান্তি বড়–য়া জানান, আসলে কী ঘটেছে তা জানার জন্য রাজনের লাশ ময়নাতদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি তা দাবি করছি।

ডা: রাজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট থেকে বিডিএস পাস করেন। পরে বিসিপিএস থেকে ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিষয়ে এফসিএস করেন। ডা: কৃষ্ণা রানী মজুমদার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। সার্জারিতে এফসিপিএস করেন বিসিপিএস থেকে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top