জামালপুরে যমুনার ভাঙনে হুমকির মুখে নবনির্মিত নৌ থানা

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে নব নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌ থানা। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার চিকাজানি ইউপির খোলাবাড়ী, বরখাল, গুচ্ছগ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে এতে নদী গর্ভে বাহাদুরাবাদঘাট নৌ থানা বিলিন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাহাদুরাবাদঘাট নৌ থানার তিনতলা ভবনটি ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল উদ্বোধনের সময় নৌ থানা থেকে যমুনা নদী ছিল আধা কিলোমিটার দূরে। বর্তমান থানা ভবন থেকে ৩০ থেকে ৪০ গজ দূরে রয়েছে।

অসময়ে নদী ভাঙনের কারণ হচ্ছে যমুনার পশ্চিম পাড়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার জেগে ওঠা চরে চ্যানেলের মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় পূর্বপার দিয়ে প্রচণ্ড স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়া। নদীর গভীরতা বেশি থাকায় পূর্বপাড় খোলাবাড়ী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।

খোলাবাড়ীর বাসিন্দা সাবেক শিক্ষক ডা. ওয়াজেদ আলী জানান, যমুনার ভাঙনে এখন সময় আর অসময় লাগে না। নদীর সামনের চরের জায়গায় বেশি ভাঙছে। শুকনো মৌসুমে চরটা কেটে দিলে ভাঙন হতো না।

আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইয়াছমিন প্রামাণিক বলেন, যমুনার ভাঙনের কারণে ১৯ বার বাড়ি সরাইছি, এবার বাড়ি হারাইয়া ঘর তোলার মতো জমি নাই। ভাঙনে সব হারিয়ে আমরা এখন পথের ভিখারি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চিকাজানী ইউপির খোলাবাড়ী যমুনা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন, ইউএনও সুলতানা রাজিয়া, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান, উপবিভাগ প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালপুর, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান, নৌ থানা ওসি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মিয়া জানান, বছরের শুরুতেই দেওয়ানগঞ্জ খোলাবাড়ীতে বাহাদুরাবাদঘাট নৌ থানাটি বিলীন হবার উপক্রম। হস্তান্তরও সম্ভব না। যমুনায় তা বিলীন হলে একদিকে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটবে।

চিকাজানি ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন জানান, গত বছরে শত শত ঘর বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে হাইস্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এবার বছরের শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে যাবে।

বাহাদুরাবাদঘাট নৌ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, নৌ থানার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। যখন কাজ শুরু করা হয় তখন নদী থেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে ছিলো। নদী দ্রুত ভাঙন শুরু হয়ে স্বল্প সময়ে খুব কাছে এসে পড়েছে। ৪০ মিটার দুরে অবস্থান করছেন নৌ থানা। দ্রুত সময়ে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে না পারলে নৌ থানাসহ আশপাশের শত শত পরিবার নি:স্ব হয়ে যাবে।

ইউএনও সুলতানা রাজিয়া জানান, নদী ভাঙনরোধে নৌ থানার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি বরাবর আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পরির্দশনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠার ফলে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাড়ে চাপ পড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধ করতে না পারলে বহু স্থাপনা, বাড়ি ঘর ভেঙে দুর্ভোগে পড়বে নৌ থানা ও বাজারসহ শত শত পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ জানান, ভাঙনরোধে খোলাবাড়ি থেকে ফুটানি বাজার পর্যন্ত ৮০০ কিলোমিটার অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলতে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এমপি জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে ভাঙনের বিষয় অবহিত করে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে। খোলাবাড়ী রক্ষার্থে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

scroll to top