জামালপুরে না রেখে ময়মনসিংহে রেফার্ডের সময় সর্দি জ্বরের রোগীর মৃত্যু

জামালপুর মেডিকেলজামালপুরে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর স্বজনরা তাড়াহুড়ো করে মৃতদেহটি নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে। এরপর থেকে ওই রোগীকে সেবা প্রদান করা নার্সদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করে। তবে ওই রোগী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাননি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে ৫৫ বছর বয়স্ক এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওই রোগীর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা পলাশতলা গ্রামে। দুপুরের দিকে রোগীর স্বজনরা ডায়াবেটিসের কথা বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র কুমার বণিক রোগীর শরীরের তাপমাত্রা ও শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য উপসর্গ নিশ্চিত না হয়েই রোগীকে ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবেই মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।

রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত নার্স আরফিনা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখেন রোগীর শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শ্বাসকষ্ট রয়েছে। এ ধরনের উপসর্গ টের পেয়েই সহকর্মী অন্য নার্স খালেদা ইয়াসমিনকে জানানোর সাথে সাথে তাদের দু’জনের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা দু’জনই রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়ে ডাক্তার সৌমিত্র কুমার বণিকের সাথে কথা বলে জানতে চান এরকম উপসর্গের রোগীকে কেন ওয়ার্ডে পাঠানো হলো।

নার্সদের কোনো ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম না থাকার বিষয়টিও ওই ডাক্তারকে বলেন। জরুরি বিভাগের ডাক্তার ওই নার্সদের কথা শুনেই রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ডের সিদ্ধান্ত নেন। আতঙ্কিত দুজন নার্স রেফার্ডের ফরমের অফিসিয়াল কাজের সময়ই হঠাৎ রোগীটি মারা যায়। রোগী মারা যাওয়ার সাথে সাথেই তড়িঘড়ি করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে রোগীর স্বজনরা।

কর্তব্যরত নার্স খালেদা ইয়াসমিন বললেন, জরুরি বিভাগ থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের কোনো রোগীকে যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ওয়ার্ডে পাঠায় তাহলে এখানে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা যে কিছুক্ষণ এ রোগীর সেবা দিলাম। রোগীর শরীরে হাত দিলাম। তার কাছে গেলাম। তাহলে আমাদের এখন কি অবস্থা হবে? সেখানে রোগীর লোকজনরাও ছিলেন বেশ কয়েকজন। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। মারা যাওয়ার পরপরই রোগীর লোকজন তড়িঘড়ি করে মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন।

জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র কুমার বণিক বলেন, রোগীর লোকজনরাই বলছিল রোগীর ডায়াবেটিস নীল হয়ে গেছে। তাই তাকে দ্রুত ভর্তির পরামর্শ দেই।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফেরদৌস হাসান বলেন, ওই রোগী দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিকসসহ নানান রোগে ভুগছিলেন। এসব রোগের জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ না থাকায় আইইডিসিআর এ পাঠানোর জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।

Share this post

scroll to top