জঙ্গল কেটে পেঁপের চাষ, বছরে ১০ লাখ টাকা আয়ের প্রত্যাশা

লালমাটির উচু পাহাড়। তাতে ঘন জঙ্গল। এক সময় সেই জঙ্গলে মানুষের যাতায়াত ছিল না বললেই চলে। সন্ধার পরে সেখানে ঘটত ডাকাতি। তবে সেই জঙ্গল এখন রূপ পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন পেঁপে বাগানে।

সাড়িবন্ধ গাছে ঝুলে আছে পেঁপে। পেঁপের বাম্পার ফলনে আগ্রহ বাড়ছে অন্যদের। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার নিতাইশা মোড়ে গড়ে উঠেছে এই পেঁপে বাগান। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা সবার নজর কারছে এই বাগান। স্থানীয় বদরুল আলম বুলু ও নাজিমুদ্দিন এই পেঁপের চাষ করেছেন। বাগানটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে দুজন শ্রমিকের।

প্রায় ৪ বছর আগে নিজ বাড়িতে ছোট পরিসরে রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষ করে সফলতা পায় বুলু। সেই সফলতার অনুপ্রেরণায় নাজিমুদ্দিন নামের একজনকে সাথে নিয়ে টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করে তারা। এই পেঁপে চাষের জন্য ৪০ হাজার টাকা মূল্যে ২ বছরের জন্য একখন্ড জমি লিজ নেন তারা।

পেঁপে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৭‘শ পেঁপের গাছ আছে বাগানটিতে। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে বিভিন্ন সাইজের পেঁপে। কিছু পেঁপে হালকা হলুদ বর্ণ হয়েছে। তবে অধিকাংশ পেঁপে গাঢ় সবুজ অবস্থায় ঝুঁলে আছে। হলুদ বর্ণ ধারণ করা পেঁপে গুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করছে দুজন শ্রমিক। গাছ গুলোতে সর্বোচ্চ ২ কেজি ওজনের পেঁপে ধরে আছে। এসব পেঁপে যাচ্ছে ঘোড়াঘাট সহ আশপাশের উপজেলার ফলের দোকানগুলোতে।

বগুড়া থেকে এই হাইব্রিড জাতের টপলেডি পেঁপের চারা সংগ্রহ করেছেন বুলু। ২৫ টাকা পিছ দরে ৮‘শ চারা কিনেছিলেন। তারমধ্যে নানা কারণে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দু’বছর পর্যন্ত ফল দেবে এই পেঁপের গাছ। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৫০ কেজি ফল পাবার প্রত্যাশা বদরুল আলম বুলু ও নাজিমুদ্দিনের।

বদরুল আলম বুলু বলেন, ‘আমি কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ নিয়ে কাজ করছি। এই পেঁপে বাগানটি করতে আমাদের প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা দু’বছরে এসব গাছ থেকে আমরা প্রায় ৮০ হাজার কেজি পেঁপে সংগ্রহ করতে পারব। টপলেডি জাতের এসব পেঁপে পাঁকা অবস্থায় খেতে বেশ মিষ্টি। প্রাথমিকভাবে আমরা ১৪ থেকে ১৬‘শ টাকা মণ দরে স্থানীয় ফলের দোকান ও সবজির দোকানে পেঁপে বিক্রি করছি। তাতে করে আমাদের এই বছর ১০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেকেই আমাদের বাগানে আসছেন এবং পেঁপের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। পেঁপে চাষে কৃষি বিভাগ আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইখলাছ হোসেন সরকার বলেন, ‘ঘোড়াঘাটের আবহাওয়া ও মাটি বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বর্তমানে এই উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ হচ্ছে। পেঁপের তেমন কোন রোগবালাই নেই। তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে পেঁপে মিলিবাগ রোগে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত এই রোগের প্রতিরোধক কিটনাশক স্পে করলে মিলিবাগ থেকে পেঁপেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমরা পেঁপে চাষীদেরকে নানা ভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছি।’

Share this post

scroll to top