ছেলেরা তাড়িয়ে দিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের ঠাঁই রাস্তায়

পুলিশে চাকরি করতেন। এখন অবসরে আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া (৭৫)। পুলিশ সদস্যমাত্রই জানেন কত কষ্টের চাকরি তাদের। দেশবাসী যখন নিরাপদে ঘুমান, তারা জেগে থাকেন। দেশবাসীর নিরাপদের ঘুম নিশ্চিত করতেই তাদের এই জেগে থাকা।

কষ্টের এই মহান পেশায় নিযুক্ত থেকে আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া তিলে তিলে মানুষ করতে চেয়েছিলেন সন্তানদের। তার সেই চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিলো কি না জানেন না তিনি। তবে সন্তানরা মানুষ হয়েছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তার।

তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া। যখন পরিবারের সহায়তা তার খুব দরকার। বিশ্রাম দরকার, নাতি নাতনিদের নিয়ে হেসে-খেলে সময় পার করার বয়স- ঠিক সেই সময়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন সন্তানেরা। কী চরম নিষ্ঠুরতা!

এখন এই বৃদ্ধ বয়সে পথে পথে ঘুরছেন তিনি। এখন তার দিন ও রাত কাটে রাস্তায়, গাছ তলায়। করোনাভাইরাসের এই চরম ভয়াবহ সংক্রমণের সময় তিনি অরক্ষিত হয়ে পড়ে থাকেন রাস্তায়। সন্তানরা তার খোঁজও রাখেন না।

ধামরাই উপজেলা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী হানিফ শেখ জানান, এক পথচারী উনাকে রাস্তা থেকে তুলে ধামরাই উপজেলায় নিয়ে আসেন। উনার সাথে কথা বলে জানা যায়, উনার ছেলেরা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, খোঁজও রাখেন না। ধামরাইয়ে তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। এখন আর সেখানেও থাকতে পারছেন না।

হানিফ শেখ বলেন, ‘আমি উনার সেই আত্মীয়ের নাম জানার পর স্থানীয় একজনের সাথে যোগাযোগ করে ওই আত্মীয়ের ঠিকানা ও ফোন নম্বর বের করি। সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান ওই আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। তার কাছ থেকে আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার বড় ছেলে মশিউর রহমান ও তার স্ত্রীর নাম্বার নেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা পুরো কথা শোনার আগেই ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।’

সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামিউল হকের নির্দেশনায় আব্দুল মান্নান ভুঁইয়াকে চিকিৎসার জন্য ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। উনি অসুস্থ, চিকিৎসার প্রয়োজন। পরে বিষয়টি ধামরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহাকে জানানো হয়।’

সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওই বৃদ্ধ বাবাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধামরাই থানা কর্তৃপক্ষ ওনার সাথে কথা বলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমি ধামরাই উপজেলার বাসিন্দা। এখন আমার পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু নেই। ভিটে-বাড়িও নেই। সারাজীবন পুলিশের চাকরি করে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করেছি। আমার অসুস্থ স্ত্রী মেয়ের কাছে আছেন। বর্তমানে আমি রাস্তায়, গাছ তলায় থাকি। এই বৃদ্ধ বয়সে থাকার একটু জায়গাও নেই আমার।

‘আমার বড় ছেলে মশিউর ঢাকার লালমাটিয়ায় থাকে। মেঝো আর ছোটটা থাকে সাভারে। মেয়ের বাড়ি নাগরপুরের ঘুঘুদিয়া গ্রামে। আমার একটু আশ্রয় প্রয়োজন।’’

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামিউল হক বলেন, ‘আমরা উনার সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। তার দায়দায়িত্ব এবং ভরণপোষণ সন্তানদের বহন করতে হবে। অন্যথায় আমরা ভরণপোষণ আইন ২০১৩ অনুযায়ী উনার সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

Share this post

scroll to top