চীনে মুসলিম নির্যাতন – করোনাভাইরাস এর আক্রমণ কি ঠেকাতে পারবে?

মো আব্দুল কাইয়ুম : যখন নির্যাতিত ও নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কেউ থাকে না তখন একমাত্র আল্লাহ তাআলাই নির্যাতিত ও নিপীড়িত মুসলমানদের জন্য যথেষ্ঠ। আর যারা মুসলমানদের ওপর বিনা কারণে নির্যাতন অব্যাহত রাখে তখন তাদের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা ইহকাল ও পরকালে কঠিন আযাব প্রস্তুত রাখেন। চীনের মুসলিমরা যখন নির্যাতিত হচ্ছে তখন গোটা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় নীরব। কেউ যখন পরাশক্তি চীনের বিরুদ্ধে কোন কথা বলছে না তখন আল্লাহ তাআলাই নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে থাকবেন এটাই মুসলিম হিসেবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আর এটাই সত্য। আর চীনের মুসলমানদের উপর নির্যাতন একমাত্র আল্লাহ তাআলাই নীবিড়ভাবে দেখছেন। আল্লাহ তাআলার শাস্তি যে কি ভয়াবহ তা কেউই জানেনা।

চীন সরকার প্রায় ১০ লাখ মুসলিমকে বন্দি রেখে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে। আর মুসলিমদের নির্যাতনের ঘটনায় গোটা বিশ্ব যখন নীরব তখন নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই উত্তম সিদ্ধান্ত নেন। আর বর্তমানে চীনে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ২৫ হাজার। আর এই ভাইরাস নাকি বাদুর থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

চলুন মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একটি আয়াত দেখি : মহান আল্লাহ মাছিদের রাজাকে সমন পাঠালেন এবং তাকে আদেশ করলেন নমরুদের বিরুদ্ধে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হতে। সে তখন দুনিয়ার সকল মশা-মাছি নিয়ে নমরুদের বাহিনীকে এমন হিংস্রভাবে আক্রমণ করল যে, অল্প সময়ের মধ্যে পুরো ময়দানে মানুষের মাথার খুলি, হাঁড়-গোঁড়, তরবারী, বল্লম ও তীরে-ধনুক ব্যতিত অপর কিছু আর পরিদৃষ্ট হল না।

কোরআনের এই আয়াত ও হাদীসের আলোকে জানা যায়, আল্লাহ এই নমরুদ পাপিষ্ঠের সাথে মোকাবেলা করার জন্য এক ঝাঁক মশা প্রেরণ করলেন। ক্ষুদ্র এই মশা বাহিনীর আক্রমণে নমরুদের বিশাল বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নমরুদও এই মশাবাহিনীর আক্রমণে ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে একটি মশা তার নাক দিয়ে ঢুকে তার মস্তিষ্কে গিয়ে অবস্থান নেয়। আল্লাহ তার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে মশাটিকে জীবিত রাখেন।

মস্তিষ্কের ভিতরে অবস্থান নিয়ে মশাটি নমরুদকে সবসময় কামড়াতে থাকে। মস্তিষ্কে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে নমরুদ নিজের মাথায় নিজেই আঘাত করতে থাকে। কিন্তু যতই সে আঘাত করুক, মশা ততই তাকে কামড়াতে থাকে। নিজেকে নিজে আঘাত করতে করতে নমরুদ ক্লান্ত হয়ে পড়লো। তাই সে তার একজন সৈনিককে ডেকে তাকে তার মাথায় আঘাত করতে বললো। কিন্তু মশার কামড় তাতে কোনো ক্রমেই কমে না। শেষে সৈনিকটি নমরুরদের মাথায় মুগুর দিয়ে আঘাত করলে মশা কিছু সময়ের জন্য কামড়ানো বন্ধ করলো। মশা পরে আবার কামড়ানো শুরু করলে সৈনিকটি নমরুদের মাথায় আবার মুগুর দ্বারা আঘাত করলে মশা কিছু সময়ের জন্য কামড়ানো বন্ধ করে। এভাবে বারবার মশা কামড়ায় আর নমরুদকে মাথায় মুগুর দ্বারা আঘাত করতে হয়। একদিন নমরুদের মাথায় মুগুর দ্বারা আঘাত করতে করতে সৈনিকটি নমরুদকে এত প্রচন্ডভাবে আঘাত করলো যে, তাতে নমরুদের মাথা ফেটে যায়। মাথা ফেটে গিয়ে নমরুদ মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে লড়াই করার জন্য নমরুদ প্রচন্ড দম্ভ করে চ্যালেঞ্জ করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর একটি ক্ষুদ্র সৃষ্টির কাছেই তাকে শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবে পরাজিত হতে হলো।

এদিকে কিছুদিন আগে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বন্দিশিবিরে আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে সরকারি একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। চীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই নথিতে উঠে এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস এই নথির বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে। এ ছাড়া ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশ নিজেদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।

একবার ভাবুন তো, আপনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নামাজ রোজা রাখতে পারছেন না, কোরআন ও অন্যান্য ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না, নারীরা হিজাব চাইলেও ব্যবহার করতে পারছেন না, এমনকি সরকারি চাকরিতে হিজাবি নারীদের নিয়োগ পথ বন্ধ; এক কথায় ধর্মীয় স্বাধীনতার সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। তখন আপনি কি করবেন? এই প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আপনারা হয়তো ভাবছেন, এমন কোন সমাজ ব্যবস্থার অস্তিত্ব কী বর্তমান পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে! অথচ এমনি ঘটনা দীর্ঘ ৭০ বছর যাবত প্রত্যক্ষ করে আসছে চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়, চীন সরকারের নির্মম নির্যাতন এবং নৃশংশতার সাক্ষী শিনজিয়াং প্রদেশের ১ কোটি ১০ লাখ মুসলমান।

পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সুরা নিসা: আয়াত ৭৫)

মানবজাতির মধ্যে যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে অর্থাৎ যারা ইমানদার মুসলমান, তাদের বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ব্যাপারে তো কোরআনে রয়েছে আরও কঠিন ধমকি। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ সূরা নিসা : ৯৩।

চীনের একজন ঊর্ধ্বতন রাজনীতিকের কাছ থেকে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা যে নথিটি ফাঁস হয়েছে তাতে দেখা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিভাবে ২০১৪ সালে অঞ্চলটি সফরকালে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অঞ্চলটির মুসলিমদের ব্যাপারে বেইজিংয়ের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

ওই সময় একটি ট্রেন স্টেশনে হামলার পর অঞ্চলটি সফর করেন শি জিনপিং। ওই হামলার জন্য উইঘুরদের দায়ী করা হয়। সফরকালে ও পরে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কঠোরভাবে সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় উইঘুর মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো অনুকম্পা না দেখানোরও নির্দেশ দেন জিনপিং।

শুধু নৃতাত্ত্বিক উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানরাই নয়; বরং একই অবস্থা অঞ্চলটির অন্য মুসলিমদেরও। ৪০৩ পৃষ্ঠার যে নথি নিউইয়র্ক টাইমস–এর হাতে, তাতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিতর্কিত অভিযান পরিচালনার অবিশ্বাস্য সব তথ্য উঠে এসেছে। উইঘুরদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, তাদের ওপর নজরদারি এবং সি চিন পিংসহ বিভিন্ন নেতার অপ্রকাশিত বক্তব্যও রয়েছে ওই নথিতে। এর থেকে জানা গেছে, জিনজিয়াং প্রদেশে অভিযান পরিচালনা নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে।

চীনা প্রেসিডেন্টের এ ধরনের নির্দেশের ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ফ্যাক্স করা হয়েছে। এর কোনো জবাব মেলেনি।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীনের লড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং জিনজিয়াং থেকে উইঘুর মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বেইজিং। প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। বন্দিদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে দেশটি।

উইঘুর মুসলমানদের নিপীড়নে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চীনের ২৮ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রাদেশিক নিরাপত্তা ব্যুরো এবং ১৯টি ছোটখাটো সরকারি সংস্থা রয়েছে।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

ইমেইল : kaium.hrd@gmail.com

Share this post

scroll to top