চীনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তির বিধান নিষিদ্ধ

চীনের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন শাস্তির বিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কড়া নিয়ম-অনুশাসনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষকদের শারীরিক বা মানসিক আঘাতজনিত শাস্তির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থতা, মৃত্যু এবং আত্বহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ মার্চ কার্যকর হয়েছে এমন আইন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে আঘাত করে এমন শাস্তি ও লাঞ্চনা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কোনো ভুলের কারণে বেত্রাঘাত করা, কয়েক ঘণ্টা অবধি মেঝেতে দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, অপমানজনক উক্তি, গালাগালসহ সব মৌখিক নির্যাতন নিষিদ্ধ।

শাস্তির বিপরীতে শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখতে উৎসাহিত করা কিংবা হোমওয়ার্ক ভুলে যাওয়ার মতো ছোটখাটো ভুলের জন্য ক্লাসরুমের টুকিটাকি কাজ করানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা কিংবা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সংশোধন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মানেন না এমন শিক্ষকদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়, তা নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও কিছু জানানো হয়নি।

চীন ১৯৮৬ সালে শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক শাস্তি বেআইনি ঘোষণা করেছিল, তবে আক্ষরিক অর্থে সেটা কার্যকর হয়নি। অনেক অভিভাবকও তাদের সন্তানদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেন এবং শিক্ষকদের এসব শাস্তির ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। মারধরের কারণে মারা যাওয়া কিংবা মানসিক লাঞ্চনার কারণে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে দেশটির মিডিয়া নিয়মিতভাবে নিউজ প্রকাশ করে আসছে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশ হওয়া নিউজে জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে দশ বছরের এক শিক্ষার্থীর গণিতে শুধু ২টা ভুল হওয়ার কারণে তার শিক্ষক তাকে জোরে কান টেনে মাথায় আঘাত করেন, ফলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

চায়না ডেইলি নামে নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পূর্বের জিয়াংসু প্রদেশের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর লেখা প্রবন্ধে তার শিক্ষক পছন্দসই ‘পজিটিভ ভাইব’ না পাওয়ার কারণে ক্লাসের সবার সামনে তার লেখার সমালোচনা করেন, কটু কথা শোনান, এমনকি থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিতও করেছিলেন। ফলে শিক্ষার্থীটি আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

নতুন পারিবারিক শিক্ষা আইন গৃহীতকরণেও চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে চীনের শীর্ষ আইনসভা এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

Share this post

scroll to top