চকবাজারে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ও ব্যাখ্যা

রাজধানীর চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা নিয়ে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি সংখ্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নিহতের সংখ্যা ৭০ বললেও পরে ঢাকা জেলা প্রশাসন ৬৭টি লাশ পাওয়ার দাবি করে। অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ নিহত ৭৮ জনের তথ্য দিয়েছিলেন।

ঢামেক হাসপাতালে লাশগুলোর জিম্মাদারের দায়িত্ব পালন করা ঢাকা জেলা প্রশাসন বলছে, নিহতের সংখ্যা মোট ৬৭। তারা ৬৭টি লাশ হাতে পেয়েছেন।

এই বিভ্রান্তির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে ফায়ার সার্ভিস থেকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনের দেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো গরম থাকায় তাড়াহুড়ো করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ঢামেকে পাঠানো হয়। যেগুলোকে আলাদা লাশ ভাবা হয়েছিল। আসলে সেগুলো ছিল লাশের পৃথক অঙ্গ। তাই এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মদ খান নিহতের সংখ্যা নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৬৭টি লাশ উদ্ধার করেছি। তবে দুয়েকটি লাশ একটির সাথে একটি লেগে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে না সেখানে একটি না দুইটি লাশ রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেইনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের পর আমরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল থেকে টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠাই। প্রথমে ৭০ বললেও হাসপাতালে নিয়ে পুনরায় লাশগুলো মিলিয়ে দেখার পর এর সংখ্যা ৬৭টিতে দাঁড়িয়েছে।

৭৮টি মরদেহ উদ্ধারের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সকালে হাসপাতালের মর্গে ১১ জনের লাশ ছিল। দুপুরে ঢাকা মেডিকেলে যখন ব্যাগে করে লাশ আনা হয়, তখন সর্বশেষ ব্যাগটিতে ৬৭ সংখ্যাটি লেখা ছিল। দুটি সংখ্যা পৃথক ভেবে সকালের ১১টি আর সর্বশেষ ব্যাগের নম্বর ৬৭ যোগ করে ৭৮ বলেছিলাম। নিহত মোট ৬৭।

বুধবার রাত ১০টার পর চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানানো হয়।

আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে, জায়গাটা সংকীর্ণ হওয়ায় জনবল ও সরঞ্জামাদি নিয়ে কাজ শুরু করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এছাড়া পানির সঙ্কটেও পড়তে হয়েছিল। তবে, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এলাকাবাসী বলছেন, ওই ভবনের কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে। কারো কারো মতে, বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়ায়। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন।

খবর পেয়ে এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top