ঘোড়াঘাটে গভীর হয় রাত, প্রকট হয় কুয়াশার সাথে শীত

প্রতি বছর শীত মৌসুমের আগমনী বার্তাটা আসে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের উপর দিয়ে। কারণ হিমালয় পর্বত পঞ্চগড় জেলার খুব কাছে অবস্থিত। তাই শীত এই দুই জেলার উপর দিয়ে তার আগমনের জানান দেয়। এ বছরেও ব্যপ্তয় ঘটেনি হালকা কুয়াশা ও মৃদু শীতের আগমনী বার্তার জানান দেওয়ার।

বাঘের হাড় কাঁপানো প্রবাদ বাক্যর বাংলা পৌষ-মাঘ মাসকে স্বাগত জানাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সন্ধা নামার পর থেকেই শুরু হয় হালকা বাতাস প্রবাহের। রাত যত গভীর হয় ততই বাড়ে কুয়াশার ভেসে বেড়ানোর খেলা। অনুভূত হয় শীত। রাতের মধ্যে থেকে শেষ ভাগে বৃদ্ধি পায় শীতের তীব্রতা। প্রতিদিন সকালে সূর্যের দেখাও মিলছে দেরিতে। তাই অধিকাংশ লোকজনই বাড়িতে কাঁথা-কম্বল ব্যবহার শুরু করেছে। চলতি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন সকাল হালকা কুঁয়াশায় ঢেকে থাকছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে ছিলো এই অঞ্চলটি। রোদেরও দেখা মিলেছে দেরিতে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। বুধবার ভোর ৬টায় ঘোড়াঘাট উপজেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় রেকর্ড করা হয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন বাড়ার সাথে সাথেই কমতে থাকবে তাপমাত্রা। বাড়বে শীত ও কুয়াশার প্রভাব।

এদিকে শীতের আগমনী বার্তায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শীতকালীন পিঠাপুলি বিক্রেতারা। তারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও সড়কের মোড়ে মোড়ে দোকান তৈরিতে ব্যস্ত। চলছে চুলো তৈরির কাজ। একাধিক জায়গায় সন্ধার পর থেকে চলছে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি। মৌসুমের প্রথম খাবার হিসেবে অনেকেই ভীড় করছেন এসব শীতকালীন পিঠা খেতে।

বুধবার সন্ধায় ঘুরে দেখা যায় ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড, আজাদমোড় ও পুরাতন বাজারে দুটি দোকানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে। সেখানে শিশু ও বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের লোকজন পিঠা খেতে অপেক্ষা করছে। শীতের পিঠার পাশাপাশি দোকানে বিক্রি হচ্ছে হাঁস ও মুরগীর ডিম। এই দুটি দোকানে সাইজ ভেদে ভাপা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। চিতই বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২৫ টাকা দামে। এসব পিঠার স্বাদ বাড়াতে পিঠার সাথে দেওয়া হচ্ছে সরিষা, মরিচ ও পুঁদিনার ভর্তা।

এছাড়াও কালিতলা, ওসমানপুর, রানীগঞ্জ ও ডুগডুগিহাট বাজারের একাধিক জায়গায় পিঠা দোকান ও চুলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। দু’একের ভিতরে এসব দোকানেও পিঠা তৈরি শুরু হবে।

বাসস্ট্যান্ডে পিঠার দোকান দিয়েছেন আরিফ ইসলাম নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘এই উপজেলায় আমিই মনে হয় প্রথম শীতের পিঠার দোকান দিয়েছি। মৌসুমের প্রথম পিঠা হিসেবে লোকজন বেশ ভালোই ভীড় জমাচ্ছে। অনেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।’

৪৩ বছর বয়সী রিক্সাচালক মোতালেব মিয়া। তিনি গত দশ বছর যাবত রাতের বেলা ঘোড়াঘাট পৌর এলাকায় রিক্সা চালায়। শুক্রবার সন্ধায় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি গত দশদিন যাবত সন্ধায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটি চাদর নিয়ে বের হই। রিক্সার সিটের নিচে চাদরটি রেখে দেই। রাত ১টার পর থেকে কুঁয়াশায় ঢেকে যায় এলাকা। চারপাশ ফাঁকা রাস্তায় ঘন কুঁয়াশায় কিছু দেখা যায় না। শরীরে শীত লাগে। এসময় গায়ে চাদর জড়িয়ে নেই।’

Share this post

scroll to top