গ্লানিকর পরিচয় ‘পতিতালয়’ থেকে মুক্তি চান দুই হাজার ভোটার

জাতীয় পরিচয়পত্রে ওদের গ্রামের নাম লেখা হয়েছে ‘পতিতালয়’। সেই পরিচয়পত্র নিয়ে ঘাটে ঘাটে হেনস্তার শিকার হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার পতিতারা। তাই এবার ভোটের বিনিময়ে হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের এমন গ্লানিকর পরিচয় থেকে মুক্তি চান তারা।
প্রমত্তা পদ্মার এক পাড়ে কয়েক দশক আগে গড়ে ওঠা এই অন্ধকার পল্লীতে সভ্যতার সব আলো যেনো বিবর্ণ। জীবন এখানে ছেড়া কাগজের মতো ছন্নছাড়া। যৌবন শেষ হলে এর বাসিন্দারা রাস্তার কুকুরের মতোই। অথচ এরা আমাদের সমাজেরই একদল মানুষ। সভ্য সমাজ যাদের ঠাঁই দেয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রে এখানকার সব বাসিন্দার গ্রামের নাম ‘পতিতালয়’। অবিশ্বাস্য হলেও সেটাই লেখা। এ কারণে এখানকার বাসিন্দাদের পদে পদে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।

পতিতালয়ের বাসিন্দা মায়া জানান, তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করতে পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে এমনকি মারা যাবার পর মৃত্যসনদ নিতেও পরিচয়পত্র লাগে। কিন্তুু পরিচয়পত্রে পতিতালয় লেখা থাকায় সমাজের মানুষেরা তাদের দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকায়। মানুষ নানাভাবে লজ্জা দেয়।

এখানকার আরেক বাসিন্দা শায়লা জানান, তিনি এই পরিচয়পত্র নিয়ে ঢাকার অনেক গার্মেন্টস ঘুরেছেন চাকরির জন্য। কিন্ত গ্রামের নাম ‘পতিতালয়’ লেখা থাকায় কেউ কাজ দেয়নি। পরে পরিচয়পত্র নকল করে কাজ নিতে হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় এই পতিতাপল্লীতে এখন ভোটের হাওয়া। বরাবরের মতো এবারও ভোট দেবেন এখানকার দুই হাজারের বেশি ভোটার। এই নারীদের এবার একটাই চাওয়া ভোটের বিনিময়ে হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে মুছে দেয়া হোক পতিতালয় গ্রামের নামটি। যেহেতু এলাকাটি দৌলতদিয়া রেলস্টশন তাই তারা এ এলাকার নামটি দৌলতদিয়া রেলস্টেশন বা দৌলতদিয়া বাজার কারার দীর্ঘদিনের দাবি তাদের।

এমনিতেই পতিতা জীবনের গ্লানি কিছুতেই মুছবার নয়। কিন্তুু বহু মুল্যবান জাতীয় পরিচয়পত্রেও সে পরিচয় উল্লেখ থাকা তাদের জন্য বড় লজ্জার। এ যেন আরেক দফা গ্লানি। রাষ্ট্র চাইলেই মুছে ফেলতে পারে এই অপমানজনক পরিচয়-এমনটাই মনে করেন এ পল্লীর বাসিন্দারা।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) রাজবাড়ী জেলা শাখার সম্পাদক শামীমা আক্তার মুনমুন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন ঠিকানা দিয়ে তাদের ছোট করা হয়েছে। কেউ এই পেশায় ইচ্ছা করে আসেনি। সমাজের কাছে এভাবে কাউকে ছোট করার অধিকার কারো নেই। ওরা সমাজের আর দশজনের মতোই এককজন মানুষ। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক শওকত আলী জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এলাকাটি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। তাই গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মানের সাথে তাদের ভোট নেয়া হয়। আর পরিচয়পত্র প্রস্তুত করেছে নির্বাচন অফিস। নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে গ্রামের নাম পতিতালয় সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top