গ্রামবাসীর টাকায় নির্মিত হচ্ছে ২ কিলোমিটার রাস্তা

নিজেদের চাঁদার টাকায় ও স্বেচ্ছা শ্রমে দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছেন গ্রামবাসীরা। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের নিচ তালিমপুর থেকে কাঠালগাড়ী পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে কাজ করছেন এলাকাবাসী।

গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) থেকে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। মেশিনের পাশাপাশি গ্রামের লোকজনও স্বেচ্ছা শ্রম দিচ্ছেন।

রাস্তা নির্মাণে দীর্ঘদিনেও কেউ এগিয়ে না আসায় সেচ্ছায় শ্রম ও নগদ অর্থ দিয়ে রাস্তা নির্মানের উদ্যোগ নেন গ্রামের লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরকোণে অবস্থিত নিচ তালিমপুর গ্রাম। গ্রামের সাথেই একাকার হয়ে আছে বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রাম। এই দুই গ্রাম মিলে প্রায় সাতশ’ পরিবারের বসতি। গ্রাম থেকে মাঠের মধ্য দিয়ে জমির আইলের মতো একমাত্র সরুরাস্তা মিলিত হয়েছে আবাদপুকুর-বগুড়া রাস্তার চয়েনের মোড়ের পূর্ব দিকে কাঠালগাড়ী নামক স্থানে।

দীর্ঘ দিন থেকে সরু রাস্তায় চলাচল করলেও রাস্তাটি পুরোপুরি নির্মাণ করার জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো ফল পায়নি গ্রামবাসী।

গত ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে ভ্যান চলার মতো রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ কোনো উদ্যোগ না নেয়নি।

বর্ষার পানিতে আবারও জমির সাথে মিশে আইলের মতো হয়ে গেছে রাস্তাটি। ফলে ওই গ্রাম দু’টি থেকে ধান, চালসহ কৃষিপণ্য ও বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীদের।

অবশেষে ভিক্ষুক, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, দিনমজুর, ধনি-গরিব মিলে চাঁদা দিয়ে ২০ হাজার টাকা ওঠান। সেই টাকা দিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করেন।

ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আহাদ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাদা পানি দিয়ে চলাচল করতে করতে জীবনটা কেটে গেল কিন্তু আমাদের ভোগান্তি নিরসনে কেউ এগিয়ে এলো না।’

জিল্লুর রহমান, ছামসুজ্জামান, আমানুর রহমান স্বপন, মিজানুর রহমানসহ গ্রামবাসীরা বলেন, ‘গ্রাম থেকে বের হবার একমাত্র এই রাস্তা। সারাদেশে বিভিন্ন রাস্তা ঘাট পাকা হলেও আমরা এমন দূর্ভাগা যে মাটি কেটেও কেউ রাস্তা নির্মাণ করে দেয়নি। ধান-চালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনে আমাদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ছেলে মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে হাঁটু পানি ভেঙ্গে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী মিলে টাকা তুলে নিজেরা শ্রম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি।”

রাস্তাটি পুনঃনির্মাণ ও পাকাকরণ করে দুই গ্রামের লোক জনের দীর্ঘ দিনের দূর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘গত চার বছর আগে রাস্তাটির কিছুটা কাজ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় চার বার প্রকল্প আকারে দিয়েও কাজ হয়নি। তার পরেও চেষ্টা করছি রাস্তা নির্মাণ ও পাকা করণের জন্য।’

রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিয়া বলেন, ‘গ্রামীন রাস্তাঘাট নির্মাণ ও পাকা করণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রকল্প আকারে দিতে হয়। যেহেতু গ্রামবাসী মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন, সেহেতু রাস্তার কাজ একধাপ এগিয়ে রইল। পাকা করণের জন্য প্রকল্প আকারে দিলে অবশ্যই তা নির্মাণ বা পাকা করণ করা হবে।’

গ্রামবাসীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা নির্মাণ বা পাকা করণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Share this post

scroll to top