গৌরীপুর হাসাপাতালের নারী চিকিৎসকে যৌন হয়রানির চেস্টা

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : স্থানীয় এক বখাটের উত্ত্যক্তের শিকার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক (মেডিকেল অফিসার)। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত বখাটে রুবেল খান (২৫) উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, রোগী সেজে এই বখাটে কর্তৃক প্রতিনিয়তই উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আসছিলেন ওই নারী চিকিৎসক। কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় সোমবার বিকেলে হাসপাতালের ডিউটি শেষে ওই চিকিৎসক বাসায় যাওয়ার পথে ফের বাসের মধ্যেই বখাটে কর্তৃক উত্ত্যক্তের শিকার হন। এ অবস্থায় প্রতিবাদ করলে বখাটে আক্রমনের চেষ্টাকালে চিকিৎসক দ্রুত ইউএনও’র বাসায় গিয়ে রক্ষা পান। উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার গৌরীপুর উপজেলার বাস্ট্যান্ডে।
থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও চিকিৎসক জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। চিকিৎসক বলেন, গত প্রায় পনের দিন আগে হাটুতে ব্যাথা নিয়ে রুবেল খান নামে এক যুবক তাঁর কাছে আসেন। তিনি তাকে দেখে প্রয়োজনীয় ঔষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দেন। এর কয়েকদিন পরে আবারও তাঁর কাছে আসেন অন্য ধরনের রোগ নিয়ে। তখনও প্রয়োজনীয় ঔষধ লিখে দেন। এই অবস্থায় প্রায়ই রুবেল খান তাঁর কক্ষে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে উত্ত্যক্ত করেন। এ অবস্থায় প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চলে যায়। এ ঘটনাটি তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে(ইউএইচও) জানালেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি তিনি। উপরুন্ত তাঁকে (চিকিৎসক) বলা হয় স্থানীয় ব্যক্তির ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। এর মধ্যে গত তিন দিন আগে তিনি নিজের কক্ষে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এই সময় ওই বখাটে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে একটি গুড়া দুধের প্যাকেট সামনে দিয়ে খেতে বলেন। তখন তিনি খাবার না খেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে লোকজন ছুটে আসার সাথে সাথে হাসপাতাল ত্যাগ করে। ফের এ ঘটনাটি তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানান।
ওই নারী চিকিৎসক আরও জানান, সোমবার তিনি হাসপাতাল থেকে দায়িত্ব পালনের পর নিজ বাসা ময়মনসিংহ শহরে যাওয়ার জন্য গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে রিকশায় চড়েন। ওই সময় বখাটে তাঁর পথ রোধ করে রিকশা চালকের কাছ থেকে লাইটার চেয়ে নিয়ে একটি সিগারেট আগুন ধরান। এক পর্যায়ে তাঁর সাথে রিকশায় চড়ে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। না যেতে পেরে অন্য রিকশায় চড়ে সোজা বাস্ট্যাস্ট্যান্ড অবস্থান করে বখাটে। বাসে উঠার পর বখাটে রুবেল খান তাঁর পিছনের সীটে বসে প্রথমে পানি ও পরে কফি নিয়ে এসে খেতে বলেন। এ সময় তিনি রাগাšি^ত হলে জোরপূর্বক কফি মূখের কাছে নিয়ে যান। পরে তিনি আত্মরক্ষার্থে বখাটেকে কিলঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে নিচে নেমে পড়েন। পরে আরেকটি রিকশায় করে সোজা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার বাসায় গিয়ে ঘটনা অবহিত করেন। এ অবস্থায় ইউএনও’র পরামর্শে সোমবার সন্ধ্যার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ওই নারী চিকিৎসক উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আমার বাসায় এসে ঘটনা অবহিত করার সাথে সাথে থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নিয়ে ওই বখাটে গ্রেফতার করতে।
এ বিষয়ে গৌরীুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা(ইউএইচও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন,তিনি উত্ত্যক্তের ঘটনা জানতে পেরেছেন গত তিনদিন আগে। এর আগে জানতেন না। ঘটনা জেনে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বখাটে সর্ম্পকে বিচার দিয়েছেন। চেয়ারম্যান বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি।
গৌরীপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত রুবেল খানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top