গফরগাঁওয়ে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে খুন

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়া ও যৌতুক না দেওয়ায় গৃহবধূ রোকসানা আক্তার সাদিয়াকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করেছে স্বজনরা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর রাতে উপজেলার পাগলা থানার গৈয়ারপাড় গ্রামে।

নিহত সাদিয়ার পরিবার, থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে উপজেলার মাখল শেখ ভিটা গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে রোকসানা আক্তার সাদিয়ার (২২) সঙ্গে বিয়ে হয় গৈয়ারপাড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলীর ছেলে রাসেল মিয়ার (৩৩) সঙ্গে। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির সংসারে দেড় বছর বয়সী সানিল ও ছয় মাস বয়সী সাওয়াদ নামে দুই পুত্র সন্তান আছে। সাদিয়ার পারিবারিক অবস্থা ভালো হওয়ায় সাদিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নিযাতন করে। চাপ দিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকা, আসসাবপত্রসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার যৌতুক আদায় করে রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। আরও চার লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। চাহিদামত যৌতুক না পেয়ে গত ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে সাদিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এরপর তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। সালিশ-বৈঠক করে এবং আর মারধর করবে না, যৌতুক দাবি করবে না এই শর্তে সাদিয়াকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। সম্প্রতি চার লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সাদিয়ার ওপর আবার চড়াও হয় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

গত দুই মাস আগে সাদিয়ার বাবা মোফাজ্জল হোসেন মারা যান। সাদিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আর যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। চাহিদামতো যৌতুক না পেয়ে একপর্যায়ে একই গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে রাসেল মিয়া। স্বামী রাসেল মিয়া পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার পর প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রী সাদিয়াকে শারীরিকভাবে নিযাতন করতো। এক পর্যায়ে শুক্রবার ভোরে সাদিয়াকে তার স্বামী রাসেল মিয়া ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন বেধড়ক মারধর করে ও গলা টিপে ধরলে সে মারা যায়। সাদিয়ার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিয়ার লাশ বাড়িতে এনে তার স্বামী ও স্বামীর ভাইয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

সাদিয়ার মা আয়মননেছা (৫০) বলেন, ১০ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি। আরও চার লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামী রাসেল সবসময় মতো মারধর করতো।

সাদিয়ার বোন হালিমা (২৩) জানান, যৌতুকের আরও টাকা না পেয়ে রাসেল মিয়া পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন আমার বোনকে পিটিয়ে ও গলা টিপে খুন করেছে।

পাগলা থানার পুলিশ পরিদশক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র রায় জানায়, সুরতহাল রিপোট অনুযায়ী লাশের গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মগে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।

Share this post

scroll to top