ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ বন্ধ থাকায় নিরূপণ হচ্ছে না ক্ষতির পরিমাণ

বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে হাওয়া হয়ে যাওয়া ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের কারোরই সন্ধান মেলেনি এখনো। অন্যদিকে ক্রেস্ট বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণ হচ্ছে না।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজে প্রায় ২১ হাজার বিনিয়োগকারী আজ শেয়ার ও অর্থ খুঁইয়ে চরম বিপাকে। তারা কোথাও ভরসা খুঁজে না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ উল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব থেকে বিনা অনুমতিতে শেয়ার বিক্রি ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা ১২ দিন ধরে । আইনি পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। অন্যদিকে আইনি জটিলতায় ব্রোকারেজ হাউজটির প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা বন্ধ থাকায় নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ।

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীরা দ্রুতই তাদের শেয়ার ও টাকা ফিরে পাবেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেও সে অনুযায়ী কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। ডিএসইর তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নয় ক্রেস্টে বিনিয়োগকারীরা। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য ক্ষতিগ্রস্তরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ক্রেস্টের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দুরাবস্থা দেখে আতঙ্কে রয়েছেন অন্যান্য হাউজের বিনিয়োগকারীরাও।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ১২ দিন পার হলেও তাদের অর্থ আত্মসাৎকারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ডিএসই তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাহলে কার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা তদন্ত করছেন?

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজে প্রায় ২১ হাজার বিনিয়োগকারীর যে শেয়ার রয়েছে, তার বাজার মূল্য ৮২ কোটি টাকার মতো। কিন্তু শুধু মাত্র ব্রোকারেজ হাউজটি না খোলার কারণে বিনিয়োগকারীদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের সব শাখা খুলে ব্যাকঅফিস সার্ভার থেকে লেনদেনের তথ্য নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ক্রেস্ট কর্তৃপক্ষ ডিএসই এবং গ্রাহকদের সঙ্গে মীমাংসায় আসার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। ডিএসই চাচ্ছে, ক্রেস্টের মালিক পক্ষ যদি স্বেচ্ছায় অফিস খুলো দেয় তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যথায় আইনি সহায়তা নিয়ে ক্রেস্টের অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেবে ডিএসই। তবে এখন পর্যন্ত ডিএসই আইনানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে গত ২ জুলাই ব্যাকঅফিস সার্ভারের নিরাপত্তায় ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয়ে তালা দিয়ে পাহারা বসিয়েছে ডিএসই।

এদিকে গত রোববার (২৮ জুন) ডিএসইর জরুরি পরিচালনা পর্ষদের সভায় রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের (আরএডি) নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তদন্ত সাপেক্ষে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সে হিসেবে আজ রোববার (৫ জুলাই) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারী নাজির আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বন্ধ থাকা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয় দ্রুত খুলে ব্যাকঅফিস সার্ভার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। এটা করা না হলে, বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা মোটেই সম্ভব হবে না। তাই এ সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।’

নাজির আহমেদ বলেন, ‘ডিএসইর তদন্ত কার্যক্রমে দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তারা এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে তাদের তদন্ত কার্যক্রম কেমন চলছে।’

জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সানাউল হক বলেন, ‘ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ঘটনা তদন্তে ডিএসই’র পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বলেন, ‘ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

Share this post

scroll to top