কৃষকের ঘরে ঘরে ধান কাটার উৎসব

সবুজ আর সোনালী রঙে রঙিন চলবিলের মাঠ। ইতোমধ্যে চলনবিলে পুরোদমে ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে। চলনবিলের কৃষকের আঙিনায় নতুন বোরো ধান আসায় কৃষাণ ও বধুদের ব্যস্ততা বাড়ার পাশাপাশি মনে যেন আনন্দের ঝিলিক লেগেছে। তবুও কৃষকের মনে হাসি নেই। কারণ সম্প্রতি ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে এই অঞ্চলের কাঁচা ও পাকা ধান মাটিতে হেলে পড়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভারি বর্ষণে চলনবিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই ও নাগর নদের পানি বিলের বিভিন্ন খালে ঢুকে পড়ায় এই অঞ্চলের কৃষক এখন আতঙ্কিত। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে চলনবিলে ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর নাটোর জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শস্য ভাণ্ডারখ্যাত সিংড়া উপজেলার চলনবিলে ৩৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এই উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৩৯০ মেঃ টন। সিংড়া উপজেলাতে নিজ এলাকার ৩০ হাজার শ্রমিক ধান কাটছে। আর বহিরাগত শ্রমিক এসেছে আরো ২৭ হাজার। এছাড়াও এই উপজেলায় ১১টি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ফসল কর্তন করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি আকস্মিক শিলা বৃষ্টিতে উপজেলায় দুই হাজার নয় শ’ হেক্টর জমির বোরো ধানসহ শতাধিক টিনের ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়াও ভারি বষর্ণে চলনবিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের সেই ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে কবিতার আত্রাই ও নাগর নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়া এই অঞ্চলের কৃষক এখন আতঙ্কিত। ইতোমধ্যে উজানের ঢলের পানি নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের জোলার বাতার খালে প্রবেশ করে প্রায় ২০ বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল পানিতে ডুবে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে কৃষকরা।

চলনবিলের ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএম আবুল কালাম বলেন, ইতোমধ্যে বিলে প্রায় ৮০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা মিনিকেট ধান বেশি চাষ করেছে। তাই নিদিষ্ট সময়ের আগেই বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারছে। তবে কিছু বি-আর ২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। এই জাতের ধান একটু দেরিতে পাকে। সেই ধানগুলোই মাঠে রয়েছে। মিনিকেট প্রতি বিঘায় তার ফলন হয়েছে ২৬ থেকে ২৭ মন। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ নয় শ’ টাকা দরে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, সব সময় শ্রমিকদের সচেতন করা হয়েছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আর এ বছর চলনবিলে কোনো শ্রমিক সঙ্কট নেই। বহিরাগত শ্রমিকদের পাশাপাশি এলাকার ভ্যান-রিক্সাচালকসহ অন্যান্য পেশার কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষও ধান কাটছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিলের সব ধান কাটা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া এ বছর ধানের দাম ও ফলনে খুশি কৃষকরা।

Share this post

scroll to top