কুরআনের আলোকে নেতৃত্বের প্রধান গুণাবলি

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অনেক গুণের উল্লেখ আছে। শুধু কুরআনের আলোকে নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে আজকের নিবন্ধে উল্লেখ করব। কুরআন মাজিদে সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল সা: এটা আল্লাহর মেহেরবাণী যে, আপনি নরম স্বভাবের হয়েছেন, কর্কশ হননি এবং কঠোর হৃদয়ের হননি। যদি তাই হতেন তাহলে আপনার আশপাশ থেকে সব লোক চলে যেত। সুতরাং, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন (যদি কোনো ভুল করে), তাদের জন্য ক্ষমার দোয়া করুন এবং তাদের সাথে পরামর্শ করুন। তারপর যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে।’

এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় আল্লাহর দৃষ্টিতে রাসূল সা:-এর নেতৃত্বের জন্য জরুরি ছিল নরম স্বভাবে হওয়া এবং কঠোর হৃদয়ের না হওয়া। তাহলে আল্লাহর দৃষ্টিতে, ইসলামী আন্দোলন সফল হতো না, লোকেরা রাসূল সা:-এর নিকট থাকত না। এ ছাড়া ক্ষমা করাও একটি বড় মানবিক গুণ এবং সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করাও একটি গুণ।
এই আয়াতের আলোকে ইসলামের সব প্রতিষ্ঠানে, এমনকি মুসলিম দেশের অফিস আদালতের প্রধানদের উচিত নম্র স্বভাবের হওয়া, কঠোর না হওয়া, ক্ষমা করা এবং সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করা।

কিন্তু আমরা কী দেখতে পাই? বিশেষ করে বাংলাদেশে আমরা দেখি, নেতারা, ইসলামী সংগঠনগুলোর হোক বা অফিস আদালতের হোক, প্রটোকলের নামে দূরত্ব বজায় রাখেন। এর ফলে সহকর্মীরা ও স্টাফরা অসন্তুষ্ট হন এবং কষ্ট পান। এ কারণে কাজ কম হয়। কেবল মুসলিম দেশ নয় বা মুসলিম সংগঠন নয়, অমুসলিম সংগঠনেও যদি নেতৃত্বের মধ্যে নরম স্বভাব থাকে তাহলে কাজ বেশি হবে এবং তারা সহযোগিতা বেশি পাবেন। কুরআনের আলোকে এটি একটি ইউনিভার্সেল বা বিশ্বজনীন নীতি, যা স্থান কাল পাত্র ভেদে কার্যকর হয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি। যখন সরকারের বিভিন্ন পদে ছিলাম বা বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম, তখন কুরআনের এই আয়াতের আলোকে নিজকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমি নম্রতা অবলম্বন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম। কঠোর ছিলাম না। পরামর্শ করতাম এবং ক্ষমা করতাম। নিচের দিকে বড় অপরাধ হলে অবশ্যই শাস্তি দিতাম। কিন্তু এর মধ্যেও ইনসাফের নীতির দিকে খেয়াল রাখতাম।

সারা বিশ্বের ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতাদের অনুরোধ করব, তারা যেন কুরআনের এই আয়াতের আলোকে চলেন এবং নম্রতাকে জীবনের প্রধান একটি গুণ হিসেবে গ্রহণ করেন। কর্কশ আচরণ পরিত্যাগ করেন এবং কঠোরতাও পরিত্যাগ করেন। তাহলে আল্লাহ তায়ালাও সন্তুষ্ট হবেন এবং তাদের সফলতা দেবেন। এ কথা বাংলাদেশের সব সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং সব অফিস আদালতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আশা করি, সবাই বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দেবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top