করোনা পরীক্ষার স্থান ও পরিধি বাড়াচ্ছি, কিন্তু তা ‘পর্যাপ্ত’ নয় : স্বাস্থ্য মহাপরিচালক

সরকার আগামী মাস থেকে কোভিড-১৯ (করোনা) রোগী সনাক্তকরণে কয়েকটি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা করছে। সীমিত সংখ্যক হাইটেক পিসিআর ল্যাব করোনা সনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে কুলিয়ে উঠতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমান্বয়ে করোনা শনাক্ত করার পরীক্ষার স্থান ও পরিধি বাড়াচ্ছি, কিন্তু তা ‘পর্যাপ্ত’ নয়। তাই দেশব্যাপী করোনা সনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে আমরা কয়েকটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

আজাদ বলেন, নতুন এই উদ্যোগ পিসিআর ল্যাবগুলোর ওপর চাপ হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের প্রয়োজনীয় করোনা সনাক্তে নমুনা পরীক্ষার পথও প্রশস্ত করবে। বর্তমানে শুধুমাত্র এই একটি পদ্ধতিতেই করোনা সনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে যে, দিনে এক লাখ নমুনা সনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে হতে পারে।’ এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতেই এই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

ডিজিএইচএস প্রধান আরো বলেন, ‘পরীক্ষার স্থান ও পদ্ধতি বাড়ানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, করোনার নমুনা সনাক্ত করার পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে জনবলের অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে আরো ৩ হাজার মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, এই মহামারীর কারণে সরকার এর আগেও বিশেষ ব্যবস্থায় ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। বিদ্যমান চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও রোগীদের চিকিৎসা দিতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

আজাদ বলেন, আগামী মাস থেকে এন্টিজেন, নিউক্লিক এসিড এবং এন্টিবডি ‘ড্রাই অ্যান্ড ওয়েট’ পরীক্ষাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এন্টিজেন’ হচ্ছে কোভিড-১৯ এর একটি উন্নত সনাক্তকরণ পরীক্ষা পদ্ধতি যা পিসিআর ল্যাব সুবিধা ছাড়াই সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই পরীক্ষার ফল জানিয়ে দেয়।

এন্টিজেন ও নিউক্লিক এসিড পরীক্ষা পদ্ধতি পিসিআর ল্যাব পরীক্ষার চেয়ে কম সময়ে ফল দিতে সক্ষম। এতে লালা বা রক্ত অন্য ধরনের যন্ত্রে পরীক্ষা করা হয়। তবে এন্টিজেন পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এন্টিবডি টেস্ট’ রক্তভিত্তিক পরীক্ষা। কিন্তু এতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে। এর ফল বের হতে সাত থেকে দশ দিন লেগে যায়।

আজাদ বলেন, ‘ড্রাই অ্যান্ড ওয়েট আবার দুটি ভিন্ন ধরনের করোনা পরীক্ষা। পথম পদ্ধতিতে স্ট্রিপের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় এবং দ্বিতীয়টি অ্যালাইনমেন্ট মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই লালা নয়, রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষাগুলোর ফলও খুব অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া যায়।’

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেছেন, তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে ৫৪ টি নমুনা সংগ্রহ সেন্টার স্থাপন করেছেন। করোনা সনাক্তকণে নমুনা সংগ্রহের জন্য এ ধরনের আরো কেন্দ্র খোলা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি বুথে দিনে ১৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী এই মুহূর্তে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করছি। পিসিআর ল্যাবগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতার সাথে সঙ্গতি রেখে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

আজাদ বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে বর্তমানে প্রতিবার ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টেস্টিং কিটস আমদানি করছে। বিশ্বব্যাপী এগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং উৎপাদনকারী দেশগুলোর ওপর তাদের সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোন একটি উৎস থেকে এগুলো সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু বৈশ্বিক এই সংকট সত্তে¦ও আমরা এই পিসিআর কিটস সংগ্রহে আমাদের প্রচেষ্টা জোদার করেছি। আগামী মাস থেকেই আমরা একসাথে ১ থেকে ২ লাখ কিটস আমদানি করব। একই সাথে জুলাই মাস থেকে করোনা সনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা আরো বৃদ্ধি করতে আমরা আরো অনেকগুলো পিসিআর ল্যাব কিনব।’

আইইডিসিআর উপদেষ্টা মুস্তাক হোসেন বলেন, মহামারীর বর্তমান প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে যে, এটা ধীর গতিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতির সামান্যতম ঘাটতিও দেশে করোনা মহামারীর ‘বিস্ফোরণ’ ঘটাতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন, যাদের কোভিড-১৯ সামাল দেয়ার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই। চিকিৎসক সংকট কাটিতে উঠতে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ ফাইজ বলেন, বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত পরীক্ষা আরো বাড়ানো উচিত। তিনি বর্তমানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, করোনা সনাক্তকরণে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হলেই কতজন লোক এই রোগে আক্রান্ত এবং কোন কোন এলাকায় করোনা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এতে কর্তৃপক্ষ এই মহামারী যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। বাসস

Share this post

scroll to top