করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

কারো কি দু’বার কোভিড-১৯ হতে পারে? করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর ছয়মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রশ্নটির উত্তর শতভাগ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিতে পারেননি। কিন্তু গবেষকরা এই বিষয়ে একমত যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার কিছু না কিছু ইমিউনিটি অর্জিত হবে, অর্থাৎ একবার সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়ে গেলে দ্বিতীয় সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে শরীর কিছু না কিছু ক্ষমতা পেয়ে থাকে। এর কারণ হলো শরীরে প্রোটেক্টিভ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গবিহীন উভয় কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

কিন্তু এসব অ্যান্টিবডি কিভাবে কাজ করে? আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এসব অ্যান্টিবডি কতদিন স্থায়ী হবে? যেহেতু কেউ দু’বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে কিনা তা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই, তাই কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জনস হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সিনিয়র স্কলার অমেশ এ. আদলজার পরামর্শও এটাই।

অ্যান্টিবডি কি?

কারো শরীর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের মতো বহিরাগত আক্রমণকারীর অস্তিত্ব টের পেলে সংক্রমণ প্রতিহত করতে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে। অ্যান্টিবডি হচ্ছে ওয়াই-আকৃতির প্রোটিন, যা শ্বেত রক্তকণিকা দ্বারা উৎপন্ন হয়। এই প্রোটিন ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিরাময় পেতে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে এমন কেউ সংক্রমিত হলে তার শরীরে আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা সেরোলজিক টেস্ট বা অ্যান্টিবডি টেস্টে শনাক্ত করা যায়।

সাধারণত সংক্রমণের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আইজিএম তৈরি হয়, কিন্তু এগুলো খুব দ্রুত হারিয়ে যায়, বলেন রুটগার্স স্কুল অব নার্সিংয়ের গ্লোবাল হেলথের অ্যাসোসিয়েট ডিন ও ক্লিনিক্যাল প্রফেসর সুজান উইলার্ড। অন্যদিকে আইজিজি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে প্রায় ৬ সপ্তাহ লাগে, কিন্তু এগুলো দীর্ঘসময় স্থায়ী হয়।

করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কতদিন লাগে?

আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্যানুসারে, কিছু কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হতে পারে। অন্য কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। একারণে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে উপসর্গ প্রকাশের পর তিন সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত, বলেন ডা. আদলজা। সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার তিন সপ্তাহ পর অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে আইজিএম ও আইজিজি উভয় অ্যান্টিবডি শনাক্ত হতে পারে।

করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি কতদিন টিকে?

এই মুহূর্তে এটা বলা বেশ কঠিন যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা কতদিন স্থায়ী হবে, বলেন ডা. আদলজা। সিডিসির সাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ দু’বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল- এটা সাজেস্ট করছে যে করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি অন্তত স্বল্পমেয়াদে হলেও ইমিউনিটি দিতে পারে।

নেচার মেডিসিন নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা ধারণা দিচ্ছে যে করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিতে পারবে না। গবেষকরা দেখেছেন, কোভিড-১৯ থেকে নিরাময়ের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে গেছে, বিশেষ করে উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ রোগীদের অ্যান্টিবডি। এটা ছিল ছোট গবেষণা, যেখানে মাত্র ৩৭টি উপসর্গযুক্ত কেস ও একই পরিমাণে উপসর্গবিহীন কেস বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর একজন ব্যক্তি পুনরায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত গবেষণা-উপাত্ত নেই। ডা. আদলজা বলেন, ‘আমরা এটা জানি না যে কোন মাত্রার অ্যান্টিবডি থাকলে একজন আরোগ্য ব্যক্তি পুনরায় সংক্রমিত হবেন না। আমরা এটাও জানি না যে এসব অ্যান্টিবডি কতদিন টিকে থাকবে। এসব অ্যান্টিবডি আরোগ্য কাউকে পুনরায় সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেবে কিনা অথবা পুনরায় সংক্রমিত হলেও উপসর্গ/জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারবে কিনা জানতে আরো গবেষণা ও সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।’

Share this post

scroll to top