এবার পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেল রাশিয়াও

যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়াও পরমাণু অস্ত্র রোধের একটি চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে সাময়িকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে।

মধ্য-পাল্লার পরমাণু শক্তি চুক্তি বা আইএনএফ নামে পরিচিত এ চুক্তিটি করা হয়েছিল স্নায়ু যুদ্ধের সময়। চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এখন নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে।

পুতিন বলেন, চুক্তির অপর পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি সাময়িকভাবে বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে। এখন আমরাও সেটা বাতিল করছি। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এ বিষয়ে তাদের সব প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার জন্যে দরজা খোলা রয়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ চুক্তিটি সই হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এই চুক্তিতে দুটো দেশের সব ধরনের পরমাণু অস্ত্রসহ স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

শনিবার পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ জানান, ইউরোপের সবগুলো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করছে, কারণ রাশিয়া গত কয়েক বছর ধরেই এ চুক্তি ভঙ্গ করে আসছে। ইউরোপে তারা নতুন নতুন পরমাণু শক্তিধর ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে।”

রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তিতে ৫০০ কিলোমিটার থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অথচ তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে, রাশিয়া সেগুলো তৈরি করছে।

গত ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়াকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছিল চুক্তির শর্ত মেনে চলার জন্যে। তারা হুঁশিয়ার করে জানিয়েছিল, অন্যথায় ওয়াশিংটনও এ চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য থাকবে না।

আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘনের মার্কিন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। উল্টো তারা অভিযোগ করেছে, চুক্তি লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।

পরবর্তীতে যা হতে পারে
শনিবার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করে বলেছেন, তারা এখন নতুন অস্ত্র তৈরিকে কাজ শুরু করবেন। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এরকম কালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন হাইপারসনিক অস্ত্র ইত্যাদি। এসব হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

তবে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র মোতায়েন করার আগে তারাও কোথাও স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে না। এ ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতার ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলো সবসময়ই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আইএনএফ চুক্তিতে কী আছে?
১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের এই চুক্তিতে সব ধরনের পরমাণু অস্ত্র এবং স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে ১৯৯১ সালের মধ্যে প্রায় ২,৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয় এবং দুটো দেশকেই একে অপরের স্থাপনা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ দেয়া হয়। তবে ২০১৭ সালে মস্কো এক ঘোষণায় দাবি করে, এ চুক্তি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করছে না।

সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top