এখন থেকেই আপনার সন্তানকে নামাজ শেখান

সন্তানদের এখন থেকেই নামাজ শেখান ; সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলুন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রত্যেক পিতামাতার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তোলা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর ওই অগ্নি থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদের আদেশ করেন তা এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন তাই করেন।’ {আল-তাহরিম : ৬}

আল্লাহ দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আত্মার পরিচর্যার সর্বোত্তম মাধ্যম নামাজ। রুহের সঙ্গে যেন তার রবের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে। একে যেন কোনো দুর্বলতা স্পর্শ না করে। আপন রিপু ও কামনা-বাসনাসহ দেহ যাতে ব্যক্তির ওপর বিজয়ী না হয়। আল্লাহ দেহকে সৃষ্টি করেছেন রুহের একটি বাহন হিসেবে। রুহ যখন মানুষের দেহকে পরিচালনা করে, তখন মানুষ সত্যিকার মানুষে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে রুহ যখন দেহের অনুগত হয়ে পড়ে, মানুষ তখন তার মনুষ্যত্বহারা হয়ে পড়ে।

এখানেই সালাতের গুরুত্ব নিহিত। সালাত তাই দীনের স্তম্ভ। এ থেকেই সন্তানকে সালাতের প্রশিক্ষণ দেয়ার গুরুত্ব অনুমেয়। সন্দেহ নেই এর গুরুত্ব কোরআন শিক্ষা, লেখাপড়া ও হিসাব-নিকাশ শেখানোর চেয়ে বেশি। কত অভিভাবকই তো আছেন যারা তাদের সন্তানকে ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে আনা-নেয়া করেই ক্লান্ত। কখনও তাদের হোমওয়ার্ক করাতে গিয়ে তারা রাত জাগরণও করেন। অথচ সন্তানদের সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে অধিকাংশ পিতা-মাতাই থাকেন বেখবর।

অনেক উদাসীন মুসলিম মনে করেন, তার সন্তান বড় হলে ঠিকই নামাজ আদায় করবে। সাবালক না হওয়া অবধি তার আর সালাত কী! অথচ সিংহভাগ পিতা-মাতাকেই দেখা যায় তাদের সাবালক সন্তানের সালাতের ব্যাপারেও গাফেল। তাদের সালাতের জন্য কোনো কথাই বলেন না। আর সন্তানদের দেখা যায় বাবা-মা’র সঙ্গে সালাতের ব্যাপারে চালাকি ও ধুর্তামি করতে। তারা মনে করে এখন কেন আমরা তো বুড়ো বয়সে নামাজ কায়েম করব।

আজকাল অনেক বাবা-মা’ই মনে করেন, সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিত্সা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা পর্যন্তই তাদের দায়িত্ব। কখনও খেলাধুলা ও জাগতিক আর কিছু বিষয়ও এর সঙ্গে যোগ করা হয়। এভাবে তারা তাদের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারেন না। কারণ তাদের গুরুত্বের সবটুকু থাকে শারীরিক প্রতিপালন, কখনও বুদ্ধিবৃত্তিক লালনকেও এর সঙ্গে যোগ করা হয়। তবে রুহ তথা আত্মার খোরাক সম্পর্কে উদাসীনতা দেখানো হয়। অথচ বাস্তবে মানুষ প্রথমে রুহ, তারপর বুদ্ধি এরপর দেহ। সন্তানকে দুনিয়ার সঙ্গে সঙ্গে আখিরাতের প্রস্তুতির শিক্ষা দিতে হবে। জাগতিক সব শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি পারলৌকিক জ্ঞানও দিতে হবে। শরিয়তের যাবতীয় হুকুম-আহকামের ইলম শেখাতে হবে। শুধু ধারণা দেয়াই যথেষ্ট নয়, সার্বিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তার অনুশীলনও করাতে হবে।

নামাজের অপরিসীম গুরুত্বের কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শৈশব-কৈশোর থেকেই সন্তানকে সালাতে অভ্যস্ত করাতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাত বছর হলে তাদের সালাতের নির্দেশ দাও, তাদের বয়স ১০ বছর হলে এ জন্য তাদের প্রহার করো এবং তাদের পরস্পরে বিছানা পৃথক করে দাও।’ [আবু দাউদ : ৪৯৫; মুসনাদ আহমদ : ৬৬৮৯]

আর আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তাতে নিজে অবিচল থাক, আমি তোমার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না, আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।’ {সূরা ত্বা-হা : ১৩২}

অথচ সাধারণ মুসলিমরা তো দূরের কথা, আমরা যারা নিয়মিত সালাত আদায় করি, শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে জীবন-যাপনের চেষ্টা করি, তারাও এ ব্যাপারে কর্তব্যে অবহেলা করি। নিজে ঘুম থেকে জেগে ফজরের সালাত আদায় করতে মসজিদে যাই, অথচ পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা সন্তানকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে যাই না। এমনটি হওয়ার কারণ সাধারণ পিতা-মাতার ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা আর যারা ইসলাম সম্পর্কে জানেন, তাদের ইসলামের নির্দেশনা মাফিক সন্তান প্রতিপালনের জ্ঞান না থাকা।

ইসলাম পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করে। তাই মুসলিম নরনারীর উচিত, নিজেকে এ দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করা। বিদ্যালয়গুলোর কর্তব্য আগামী প্রজন্মকে এ দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে নিজে নামাজ আদায় করা এবং সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সন্তানগুলোকে সাহাবিদের সন্তানের মতো আদর্শ মানুষ বানিয়ে দিন। আমীন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top