ঈশ্বরগঞ্জে ‘হত্যার পর গুম করে ফেলা’ নারী জীবিত উদ্ধার

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হত্যার পর এক নারীকে গুম করে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগে মামলা হওয়ার প্রায় আট মাস পর সেই নারীকে জীবিত উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহের পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)।

শিলা বেগম (২৫) নামে ওই নারীকে নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জনি মিয়া (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পানান গ্রামের বাসিন্দা চাঁনফর আলীর মেয়ে শিলা বেগমকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে শিলার ভাই আবুল মনসুর বাদী হয়ে প্রেমিক, তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার ওই গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামী পরিত্যাক্তা ওই নারী চার সন্তানের জননী।

ওই নারীর ছোট বোন মোসা: নুরজাহান বেগম বলেন, তিনি এক সময় নারায়গঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার ঝালকুড়ি এলাকায় বসবাস করে সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। শিলা একসময় জর্ডান প্রবাসী ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন। গত ৩১ মার্চ শিলা সিদ্ধিরগঞ্জে তার বাসায় বেড়াতে যান। পরদিন তিনি পানান গ্রামে ফিরে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু তিনি গ্রামে ফিরে যাননি। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পান পরিবারের লোকজন। উদ্বিগ্ন হয়ে সকলেই নানা জায়গায় গিয়ে শিলার খোঁজ করেন। কিন্তু তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার বোন নিখোঁজের পর তার বাবা ও মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

নুর জাহান বেগম আরো বলেন, তিনি বাবা-মার সেবা করার জন্য চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন।

এদিকে, তার বড় বোন রুমা আক্তারও জর্ডান প্রবাসী। বোন নিখোঁজের পাঁচ মাস পর প্রবাসী বোন (রুমা আক্তার) মোবাইল ফোনের ইমু অ্যাপসে একটি গ্রুপ থেকে একজন নারীর লাশের একটি ছবি পান। সেই লাশটির সাথে তার নিখোঁজ বোনের মিল থাকায় সেই ছবিটি তাদের কাছে পাঠায়। পরে এই ছবির সাথে ও লাশের পাশে জুতার মিল দেখে তার বড় ভাই মো: আবুল মনসুর লাশটি তার নিখোঁজ হওয়া বোনের দাবি করেন।

পরে পরিবারের সাথে পরামর্শ করে এ ঘটনায় আবুল মনসুর গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ময়মনসিংহের চার নম্বর আমলী আদালতে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় পাশের খালবলা গ্রামের মো: জনি মিয়া (২৫), তার বাবা আবুল হাশেম (৫০), তার ছোট ভাই আকাশকে (২৩) আসামি করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জনি তার বোনকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। আর এই কাজে জনিকে তার বাবা ও ভাই সহায়তা করেছে।

আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

পিবিআইর পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো: আবুল কাশেম (পিপিএম) সাংবাদিকদের বলেন, মামলা তদন্তভার হাতে পেয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় জনির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার পানিয়াদী এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানকার মো: আবদুল হাই পাঠওয়ারির বাড়ি থেকে জনি ও কথিত নিহত শিলা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসা করলে তারা দুজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে দাবি করেন।

আটক জনির ভাই আকাশ (১৭) জানান, সে ঢাকায় থাকতো। ওই নারীর সাথে বড় ভাই জনি মিয়ার কী সম্পর্ক তা তার জানা নেই। ভাই ওই নারীকে বিয়ে করেছেন কিনা তা-ও আমরা জানি না। শুধু শুধু হত্যা মামলায় আমাদের আসামি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আবু বক্কর সিদ্দিক (পিপিএম) বলেন, আসামিদের বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

scroll to top