ইসলামাবাদ-রিয়াদ বন্ধুত্বে অস্বস্তিতে দিল্লি

কাশ্মিরে সাম্প্রতিক হামলায় বিশ্বজুড়ে সহমর্মিতা কামনা করেছিল ভারত। কিন্তু সৌদি ও চীনের কারণে সে আশা ভঙ্গ হয়েছে তাদের।

পুলওয়ামা ঘটনায় পাকিস্তানকে একঘরে করতে বিশে^র প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ভারত। চীনের হস্তক্ষেপে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ভঙ্গুর পাকিস্তানী অর্থনীতিকে আরো নাজুক করার জন্য দুটি বিশেষ পদক্ষেপ নেয় দিল্লি। এর একটি হচ্ছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে দেয়া বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে আসা পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্কারোপ করা।

কিন্তু পাকিস্তান সফরে এসে গত রোববার সৌদি যুবরাজ ইমরান খানের সাথে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিনিয়োগের যেসব চুক্তি করেন, তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে দিল্লি। অন্য সময় হলে বিষয়টি হয়তো এতটা মুখ্য হয়ে উঠতো না, কিন্তু পুলওয়ামায় হামলার চারদিনের মধ্যেই ভারতের মিত্র বলে পরিচিত একটি দেশের পক্ষ থেকে এ পরিমাণ সহায়তায় তাদের মূল অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সফরের শেষ মুহূর্তে দুই দেশের যে যৌথ বিবৃতি তাতেও খুশি হওয়ার কোনো কারণ পায়নি ভারত। কারণ ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের জঙ্গি তালিকায় নাম তোলা নিয়ে কোনো রাজনীতি করা উচিত নয়।

এ বিবৃতিতে কারো নাম না নেয়া হলেও এর উদ্দেশ্য যে ভারত, তা পরিষ্কারই বুঝা গেছে। আবার এটি যে পুলওয়ামা ঘটনার জের, তাও কাউকে বলে দিতে হচ্ছে না। ভারত যেখানে আশা করেছিল, সৌদি আরব ইমরান খানকে এ বিষয়ে কিছুটা সংযত বা নিয়ন্ত্রণের কথা বলবেন সেখানে এ ধরনের যৌথ বিবৃতিতে হতাশ হয়ে পড়েছে ভারত। বরং ওই বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের ভূমিকার ঢালাও প্রশংসাও যেমন করা হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতে এ রকম কাজে যৌথ সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা সবারই জানা। এ অবস্থায় সৌদি যুবরাজ দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করে ইসলামাবাদের মনোবলটা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সাথে পাকিস্তানের দুই হাজার বন্দির মুক্তির ঘোষণা- সবই ভারতের প্রতিকূলে গেছে।

আর মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে পাকিস্তানকে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে ভারত হতবাক হয়ে পড়েছে। কারণ তিনি বলেছেন, সৌদি আরবে তিনিই পাকিস্তানের দূত। আরেক আলোচনায় তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের কোনো কথায় বা ডাকে তিনি ‘না বলতে পারেন না।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার ভারত সফর শুরু হচ্ছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। যদিও তিনি বিতর্ক এড়াতে পাকিস্তান থেকে সরাসরি ভারত যাননি। বরং পাকিস্তান থেকে তিনি নিজ দেশে ফিরে যান। এরপর আবার নতুন করে সফর শুরু করবেন ভারতে। অবশ্য ভারত থেকে যাবেন দিল্লির আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনে, যাদের সাথেও ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।

সৌদি যুবরাজের ভারত সফরের আগে অবশ্য পুলওয়ামা বা কাশ্মির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রিয়াদের লক্ষ্য (ভারত ও পাকিস্তান) দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানো। আমরা চাই মতানৈক্য দূর করার কোনো শান্তিপূর্ণ পথ। কারণ, দু’টি দেশই সন্ত্রাসসহ একই ধরনের সমস্যায় রয়েছে। আমরা চাই, দু’দেশই বিরোধ দূরে ঠেলে সমাধানের পথে হাঁটুক।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top