ইসরাইলের ওমান-আমিরাত মিশন

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ওমান সফরের পর এবার আরব আমিরাত গেলেন ইসরাইলের আরেক মন্ত্রী। শুক্রবার ওমান যান ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাত যান ইসরাইলি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী মিরি রেগেভ। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের মাঝে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আকস্মিক সফরে শুক্রবার ওমান গিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজেক রবিনের পর দ্বিতীয় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সেখানে গেলেন।

এদিকে নেতানিয়াহুর এ সফরের নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরান। শনিবার এক বিবৃতিতে ইরানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরাইল ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে জায়নিস্টরা (ইসরাইল) মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ৭০ বছর ধরে চলা দখলদারিত্ব এবং হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে।’

নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উপসাগরীয় দেশটির শাসক সুলতান কাবুসের আমন্ত্রণে শুক্রবার হঠাৎ করেই নেতানিয়াহু সেখানে গেছেন।

ইরানের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসলামিক দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

‘ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ দাবিতে আত্মসমর্পণ এবং জায়নিস্টরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে এদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং মুসলমান ও ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে’, বলেন কাসেমি।

১৯৯৫ সালে জেরুসালেমে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ ও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসেফ বিন আলাবির মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।

মাসকাটে নেতানিয়াহু ও সুলতান কাবুস

ওমান ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম দেখভালের জন্য ১৯৯৬ সালে দেশদুটি অফিস স্থাপনে সম্মত হয়েছে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনী ইনতিফাদার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মাসকাট আবারো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।

এদিকে, ইসরাইলের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মিরি রেগেভের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সংগঠনের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, দখলদার ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে তখন একজন ইহুদিবাদী মন্ত্রীকে আবুধাবি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে আরব আমিরাত।

মিরি রেগেভ গত রোববার একটি ক্রীড়া প্রতিনিধিদল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। মুসলমান ও মানবজাতির শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইলের কোনো মন্ত্রীর এটাই প্রথম আরব আমিরাত সফর।

ওই মন্ত্রী আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মাদ বিন জায়েদের আমন্ত্রণে নগরীর একটি মসজিদও পরিদর্শন করেন।

এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি। তিনি তার অফিসিয়াল টুইটার পেইজে লিখেছেন, আবু ধাবিতে ইহুদিবাদী প্রতিনিধিদলকে দেয়া উষ্ণ সংবর্ধনার দৃশ্য গাজা উপত্যকার শিশু হত্যার চেয়ে কোনো অংশে কম বেদনাদায়ক নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলো দেড়শ’ কোটি মুসলমানের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। গত ২৫ অক্টোবর ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওমান সফরে গিয়ে সুলতান কাবুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার এ সফরের খবর একদিন পর ছবিসহ প্রকাশ করা হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top