গত সোমবার বিতর্কিত গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তথা ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়ার কোনো অধিকারই যুক্তরাষ্ট্রের নেই। গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে এক নির্বাচনি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে তার দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে গোলান মালভূমি নিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে সই করেন। সামনে ইসরাইলের নির্বাচন। সে নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে বাড়তি সুবিধা দিতেই এটা করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
কারণ হিসেবে এরদোগান বলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী, গোলান মালভূমি সম্পূর্ণভাবে সিরিয়ার অংশ। এখন যুক্তরাষ্ট্র এই ভূখ- দিয়ে দিচ্ছে ইসরাইল। কিন্তু তাদের সে ধরনের কোনো অধিকারই নেই।
তিনি আরো বলেন, গোলান মালভূমির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে সমর্থন পায়নি ইউরোপিয়ান ইয়ানিউন, ওআইসি, রাশিয়া, চীনসহ উল্লেখযোগ্য কারোই। এ সত্য কথা বলাটা আমাদের দায়িত্ব। ওআইসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছে। ভবিষ্যতেও তারা একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাবে।
মুসলমানদের অপমান করেছেন ট্রাম্প
এদিকে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম বিশ্ব ও আরব দেশগুলোকে অপমান করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সময় মুসলিম বিশ্ব যদি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাতো, তাহলে ট্রাম্প আজ এ ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ নেয়ার সাহস পেতেন না।
হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প পশ্চিম এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ায় চরম আঘাত হেনেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
গত সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে গোলান মালভূমি ইসরাইলের ভূখ- এ ঘোষণাপত্রে সই করেন ট্রাম্প। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এ জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন- যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম। আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ ও নানা সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ।
১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সেই সময় ইসরাইলী বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকারও নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল কখনই ইসরাইলের এই দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।
২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গোলান মালভূমির মালিকানা সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি হয়। সেখানে উপস্থিত ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫১ দেশ এ ভূখ-ের মালিকানা সিরিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সূত্র : আনাদোলু