ইতিহাসবিদ ড. নীহাররঞ্জন রায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের গর্ব

ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : বরেণ্য ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা গবেষক বাঙালি পণ্ডিত নীহাররঞ্জন রায়ের জন্ম ১৯০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জে। তার প্রাথমিক শিক্ষা ময়মনসিংহে। বাবা মহেন্দ্রচন্দ্র রায় ছিলেন স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক। ১৯২৪ সালে সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। তিনি মণিকা রায় নামীয় এক রমণীকে বিয়ে করেন। রায় দম্পতির সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। তিনি বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটি রায়ের স্রষ্টা হিসেবে উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের শিল্পকলা শাখায় এমএ পাস করে রেকর্ড মার্কসসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হয়ে গবেষণায় ব্রতী হন। ১৯৩৫ সালে বৃত্তি নিয়ে ইউরোপ যান এবং হল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি এবং লন্ডন থেকে গ্রন্থাগার পরিচালনা বিষয়ে ডিপ্লোমা নেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

কর্মজীবনে বিবিধ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নীহাররঞ্জন রায়। তিনি তাঁর কর্মজীবন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপনা দিয়ে শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে শিল্পকলা বিষয়ে রানি বাগেশ্বরী অধ্যাপক হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই।

১৯৬৫ সালে অবসরগ্রহণের পর তাঁকে ইমেরিটাস প্রফেসর করা হয়। জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন—শিল্পকলা, প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি এবং জীবনকাহিনীসহ নানা বিষয়ে তাঁর বিচরণ। তাঁর প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থ : ‘রবীন্দ্র সাহিত্যের ভূমিকা’, ‘বাঙালি হিন্দুর বর্ণভেদ’, ‘বাংলার নদ-নদী’, ‘বাঙালির ইতিহাস’, ‘প্রাচীন বাংলার দৈনন্দিন জীবন’। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য ছিলেন।

কর্মকুশলতা ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি, ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোয়াট স্বর্ণপদক, ১৯৫০ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার, ১৯৬০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী স্বর্ণপদক এবং ১৯৬৯ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৬৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭০ সালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির বিমলাচরণ লাহা স্বর্ণপদক এবং ১৯৮০ সালে কলকাতার প্রফুল্লকুমার সরকার (আনন্দ) পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি কলকাতায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

Share this post

scroll to top