ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন, পরিবারের হাল ধরতেই বেচে নিলেন টেকনিশিয়ানের কাজ

অভাব-অনটনের সাথে যুদ্ধ করে পড়াশোনা করে যাচ্ছিলেন অপূর্ব রায়। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, কিন্ত হঠাৎ করে উপার্জনক্ষম বাবা মারা গেলে পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয় অপূর্বের। তবে থেমে যাননি তিনি। ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ানের কাজ করে পড়াশোনার খরচ যোগিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন এই শিক্ষার্থী।

অপূর্বের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের চকপাড়া মহল্লায়। তার বাবা নিখিল রায় একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করে সংসার চালাতেন। ৪ মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মা বিভা রানী একজন গৃহিণী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে অপূর্ব সবার ছোট।

২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করে গৌরীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন অপূর্ব। চলতি বছরের মার্চে পরীক্ষা দিয়েছেন চতুর্থ সেমিস্টারের।

শনিবার ময়মনসিংহ লাইভ এর প্রতিনিধি আরিফ উজ্জামানের সাথে কথা হয় অপূর্বের সঙ্গে। কথায় টেকনিশিয়ার হওয়ার গল্পটা বের হয়ে আসলো তার মুখ থেকেই।

অপূর্ব রায় বলেন করোনাকালে কলেজ বন্ধের সময়টা কাজে লাগাতে স্থানীয় এক টেকনিশিয়ান বড় ভাইয়ের সাথে থেকে বৈদ্যুত্যিক ওয়্যারিং ও গ্যাসের চুলা সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখি। চার মাস আগে বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গেলে সংসারে অভাব দেখা দেয়। তখনই বুঝতে পারি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে নিজের খরচটা নিজের যোগাতে হবে। সেই তাগিদ থেকেই এই পেশায় আসা।

কলেজ বন্ধ থাকায় দিনের বেলা বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ও গ্যাসের চুলা সার্ভিসিং করেন অপূর্ব। পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন হোম ডেলিভারিতে। কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। মাস শেষে যে টাকা আয় হয় সেখান থেকে নিজের পড়াশোনা খরচ বাবদ একটা অংশ রেখে বাকি টাকা সংসার খরচের জন্য তুলে দেন মায়ের হাতে।

টেকনিশিয়ানে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় কটূক্তি ও বাজে কথা শুনতে হয় অপূর্বের। ছোট মানুষ বলে কেউ কেউ ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতেও কার্পণ্য করে। এসব ঘটনায় মন খারাপ হয় তার।

এদিকে, কলেজে পড়াশোনা করতে গিয়ে অপূর্বের সঙ্গে পরিচয় সহপাঠী মনন সরকারের। বিকল্প আয়ের পথ বের করতে মননের হাত ধরেই অপূর্ব বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফি ও ভিডিও চিত্র ধারণের কাজ শুরু করেন। পরে দুজনে গড়ে তুলেন এএস ইভেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ফটোগ্রাফি, ভিডিও ও আইটি সার্ভিসিংয়ের সেবা দেয়া হয়।

অপূর্ব রায় বলেন, নিজের আয়ে খরচ চালানোর মধ্যে মজা আছে। তার চেয়ে বড় আনন্দ পরিবারের ওপর চাপ কমানো। এখন একটাই লক্ষ্য, পড়াশোনায় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি করা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান সিদ্দিকী মনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে আয় করা ভালো, কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে, কাজ করতে গিয়ে পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয়। বেশি আয়ের লোভে যেন পড়াশোনার চেয়ে কাজের গুরুত্ব না দিয়ে ফেলি, সেদিকেও একটু সর্তক থাকতে হবে।

Share this post

scroll to top