আহত শিশুকে বাঁশের স্ট্রেচারে করে নিয়ে ১৩০০ কিলোমিটারের যাত্রা!

ভারতে লকডাউনের জেরে অন্য রাজ্যে আটকে পড়ে চরম দুর্দশার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে বহু অভিবাসীকে। কেউ কেউ তো আবার বাড়ি ফিরতে নিজেদের পায়ে ভরসা করেই পথে বেরিয়ে পড়েছেন। মাইলের পর মাইল হাঁটছেন, লক্ষ্য একটাই, যেকোনোভাবে ঘরে ফিরতে হবে। আর আশঙ্কা? না ফিরতে পারলে করোনায় ভুগে না হলেও অনাহারে তো মরতে হবেই।

ঠিক তেমনই এক পরিবারের দেখা মেলে উত্তর প্রদেশের সেরিংয়ের রাস্তায়। একই পরিবারের ১৭ জন সড়ক পথেই পায়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সাথের ছোট ছেলেটির ঘাড় ভেঙে গেছে, যন্ত্রণার কাতরাচ্ছে সে। তাতে কী, তবুও হাঁটা থামায়নি ওই পরিবার। গুরুতর আহত শিশুটিকে বহনের জন্যে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে হাতে তৈরি একটি স্ট্রেচার বানিয়েছেন তারা। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যকে সেই স্ট্রেচারে শুইয়ে কাঁধে করেই পথ হেঁটেছেন তারা।

লুধিয়ানা থেকে মধ্যপ্রদেশের সিঙ্গরৌলি পর্যন্ত যাওয়াই লক্ষ্য, আর এর জন্যে পেরোতে হবে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পথ।

ঘরে ফেরার টান, তাই একরকম মরিয়া হয়েই পথে নেমে পড়েন ওই অভিবাসীরা। যাত্রাপথে তাদের কাছে ছিল না কোনো পর্যাপ্ত খাবার, টাকা-পয়সা। এমনকী পায়ে নেই চটি-জুতোও, খালি পায়েই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যান তারা।

জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে যাওয়ার পরে নাকি শেষ পর্যন্ত সহায়তা পায় ওই অভিবাসী পরিবার। তবে ততক্ষণে অসুস্থ ছেলেটিকে কাঁধে বয়ে তারা প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছেন। সব জানার পরে কানপুরের পুলিশ তাদের জন্য একটি ট্রাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

একের পর এক এমন বহু ঘটনাই সামনে আসছে এই লকডাউনের মধ্যে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরতে গিয়ে বহু অভিবাসী শ্রমিক মারাও গেছেন ইতিমধ্যেই। এ যেন এক চরম হাহাকারের সময়।

শিশুকে বহনকারী ওই পরিবারটি দিনমজুরের কাজ করতেন। লকডাউনের ফলে অন্য রাজ্যে আটকে পড়েন তারা। কোনো সহায়তা সেভাবে না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

ওই পরিবারেরই এক সদস্য জানান, লুধিয়ানা থেকে প্রায় ১৫ দিন টানা হেঁটেছেন তারা। সাথের বাচ্চাটির ঘাড় ভেঙে যাওয়ায় কাঁধে তুলে নিয়েও পথ পেরিয়েছেন, থেমে যাননি তবুও। পেটে দানাপানি প্রায় কিছুই পড়েনি, তবু হেঁটেছেন, হেঁটেই গেছেন। তবে শেষপর্যন্ত পুলিশের সাহায্যে ওই ট্রাকের ব্যবস্থা হওয়ায় তারা আশা করছেন খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন।

সূত্র : এনডিটিভি

Share this post

scroll to top