আবারো শান্তির বার্তা দিল পাকিস্তান : ১০০ ভারতীয় জেলেকে মুক্তি

দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে অনেকবারই যুদ্ধের মুখোমুখি অবস্থায় চলে গেছে। সর্বশেষ এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা হওয়ার পর। এনিয়ে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটে। তবে পাকিস্তান সে সময় আটক এক ভারতীয় পাইলটকে কোনো শর্তারোপ ছাড়াই মুক্তি দিলে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তখন বিষয়টিকে ‘শান্তির বার্তা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

সে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর আবারো শান্তির বার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের নৌসীমার মধ্যে আটক করা ১০০ ভারতীয় জেলেকে মুক্তি দিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা ভারতে পৌঁছান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় জেলেদের মুক্তি দিয়ে পাকিস্তান নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের ইঙ্গিত দিতে চেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ মাসের পাঁচ তারিখে ইসলামাবাদ এক ঘোষণায় জানায়, সে দেশের কারাগারে ভারতীয় জেলেদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেবে পাকিস্তান। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম দফায় ১০০ জেলেকে মুক্তি দেয় ইসলামাবাদ। তারপর আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন ওই জেলেরা৷ পরে অমৃতসর থেকে তারা ট্রেনে ভদোদরা পৌঁছান।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে করাচি কারাগারে বন্দি ছিলেন এ জেলেরা। দেশে ফিরতে পেরে তারা সবাই খুব আনন্দ প্রকাশ করেন। সবার চোখই আনন্দাশ্রুতে ভরে যায়।

প্রথম দফায় মুক্তি পাওয়া জেলেদের সবাই নরেন্দ্র মোদির গুজরাটেরই বাসিন্দা। তাদের একজন জানান, অনেকে না বুঝে আন্তর্জাতিক নৌসীমানা পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে। আবার কেউ কেউ মাছ ধরার জন্য জেনেশুনে পাকিস্তানের নৌসীমানায় ঢুকে যায়। এদের মধ্য থেকেই সাড়ে তিন শতাধিক জেলে পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। ১৭ মাস সেদেশের কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে।

পুলওয়ামা হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় বন্দিদের ওপরও কড়াকড়ি বাড়ে। সেই সময় তাদের বলা হয়েছিল, ‘নিরাপদে থাকতে হলে নিজ নিজ কুঠুরি থেকে যেন বের না হই’৷

গত ৫ এপ্রিল পাকিস্তান ঘোষণা করে তাদের কারাগারে বন্দি ৩৬০ জন ভারতীয় জেলেকে তারা মুক্তি দেবে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রতিবেশী দেশের প্রতি সৌজন্যতা দেখাতেই তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়। চার দফায় জেলেদের মুক্তি দেয়া হবে৷ প্রথম দফায় ১০০ জনকে ছাড়া হয়।

পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফের গাড়িবহর এক আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়। এতে ওই বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়। এরপর ভারত এরজন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায়।

কিন্তু ভারতের এ আহ্বানে বিশ্ব ভ্রুক্ষেপ না করলে ভারত নিজেই পাকিস্তানে হামলা চালাতে শুরু করে। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ভারত আবারো পাকিস্তানের সীমানায় প্রবেশ করলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর হামলায় ভারতীয় একটি মিগ-২১ বাইসন বিমান ভূপাতিত হয়। তার পাইলট অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো শর্ত ছাড়াই পাকিস্তান ওই পাইলটকে মুক্তি দিলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অনেকখানিই হ্রাস পায়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top