আনন্দ মোহন কলেজ থেকেই নায়ক সোহেল রানার রাজনীতির হাতেখড়ি

মো. আব্দুল কাইয়ুম : ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের পর্দা কাঁপানো অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। আজ এই অভিনেতার ৭৪তম জন্মদিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ এর প্রযোজক ছিলেন সোহেল রানা। পরে নায়ক খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় প্রযোজক পরিচয়।

অভিনেতা সোহেল রানার রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হয় ১৯৬১ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে। ১৯৬৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৬৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি হন। ১৯৬৬ সালে ময়মনসিংহের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এজিএস হন।

সোহেল রানার পারিবারিক নাম মাসুদ পারভেজ। তার বাবা মরহুম আব্দুল মালিক আর মা মরহুমা দেলওয়ারা বেগম। তার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। প্রতিবছরই বিভিন্ন জেলায় তার পোস্টিং হতো। ১০ বছরে প্রায় ১২-১৪টি স্কুলে পড়েছেন তিনি। অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হাইস্কুলে। এখান থেকেই মেট্রিক পাস করেন। পরে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে পড়েন।

ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ সোহেল রানা নাম ধারণ করে। ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম।

১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন। এখানে তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কবরী। এরপর অসংখ্য ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে।

সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এই নায়কের। সোহেলার রানা বলেন, ‘মাসুদ রানা ছবিটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর আমাকে বঙ্গবন্ধুও বলেন, চলচ্চিত্রে থেকে যাওয়ার জন্য। এরপর ‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’- এভাবে একের পর এক প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। চলচ্চিত্রকে ভালোবেসেছি। সারাজীবন চলচ্চিত্রের সঙ্গে পার করলাম।’

সোহেল রানার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পারভেজ ফিল্মসের ব্যানারে ৩০টির অধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো- ওরা ১১ জন, মাসুদ রানা, দস্যু বনহুর, গুনাহগার, জবাব, যাদুনগর, জীবন নৌকা, যুবরাজ, নাগ পূর্ণিমা, বিদ্রোহী, রক্তের বন্দী, লড়াকু, মাড়কশা, বজ্রমুষ্ঠি, ঘেরাও, চোখের পানি, ঘরের শত্রু, গৃহযুদ্ধ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, শত্রু সাবধান, খাইছি তোরে, ভালোবাসার মূল্য কত, অন্ধকারে চিতা, ভয়ংকর রাজা, ডালভাত, চারিদিকে অন্ধকার, রিটার্ন টিকিট ও মায়ের জন্য পাগল। গুণী এই নায়কের ছেলেও এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেই নির্মাণ করেন ‘অদৃশ্য শত্রু’ নামের চলচ্চিত্র।

দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে সোহেল রানা তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ব্যক্তিজীবনে সোহেল রানা ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন ডা. জিনাত পারভেজকে। তাদের সুখের দাম্পত্যে একমাত্র সন্তান মাশরুর পারভেজ জিবরান। বাবার পথ ধরে মাশরুরও চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

Share this post

scroll to top